Increase Reset Decrease

শিব

অর্ধনারীশ্বর

হিন্দুদের দেবদেবীর মধ্যে জনপ্রিয়তার বিচারে অগ্রগণ্য সম্ভবত শিব। প্রাক্-বৈদিক যুগে তিনি প্রধান দেবতারূপে পূজিত হতেন, বৈদিক যুগেও তিনি অন্যতম প্রধান দেবতারূপে বন্দিত; পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত এবং পরবর্তী যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ধর্মসাহিত্য, লোকসাহিত্য, ধর্মজীবন এবং লোকজীবন-সর্বত্র দেবদেবীগণের মধ্যে শিবেরই প্রায় একাধিপত্য। তত্ত্বভাবনায় এবং রূপকল্পনায় এত বৈচিত্র, এত চমৎকারিত্ব এবং এত ভাবাবেগ আর কোনো দেবদেবীকে কেন্দ্র করে প্রকাশ হয়েছে বলে মনে হয় না। বর্ণহিন্দু, নিম্নবর্ণ, আদিবাসী উপজাতি, ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের এত কাছাকাছি আর কোনো দেবদেবী আসতে পারেননি। হিন্দু দেবদেবীর বিস্তৃত তালিকায় ‘দেবাদিদেব’, ‘মহাদেব’, ‘মহেশ্বর’ প্রভৃতি শ্রেষ্ঠত্বজ্ঞাপক অভিধাগুলি শুধুমাত্র শিবের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত।

শিবের একটি বিশেষ রূপ অর্ধনারীশ্বর। এই রূপটি হিন্দু দেবদেবীদের মধ্যে অনন্য। এর যেমন একটি ধর্মীয় এবং দার্শনিক তাৎপর্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে একটি সামাজিক তাৎপর্যও।

মহাকবি কালিদাস তাঁর জগৎপ্রসিদ্ধ মহাকাব্য ‘রঘুবংশ’-এর সূচনায় লিখেছেন :

“বাগর্থাবিব সম্পৃক্তৌ বাগর্থ-প্রতিপত্তয়ে।
জগতঃ পিতরৌ বন্দে পার্বতী পরমেশ্বরৌ।।” (১/১)

কালিদাস বলছেন, শব্দ এবং অর্থ যেমন পরস্পরের সঙ্গে নিত্যসম্বন্ধযুক্ত, জগতের জননী এবং জনক-পার্বতী ও মহেশ্বরও তেমনি সতত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত।

Print