
অর্ধনারীশ্বর মূর্তির তাৎপর্য
অর্ধনারীশ্বর ভাবনার মূলতত্ত্ব ও দার্শনিক তাৎপর্য হল : ঈশ্বর বা সত্য বস্তুত এক। পরম ঈশ্বর বা পরম সত্যের নিত্য-রূপের নাম ‘শিব’ এবং লীলা-রূপের নাম ‘পার্বতী’। শব্দ এবং অর্থ যেমন অচ্ছেদ্য, অবিচ্ছিন্ন এবং অবিভাজ্য, তেমনি শিব এবং শিবানী, হর এবং পার্বতী এক এবং অভিন্ন। সুতরাং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অর্ধনারীশ্বর বেদান্তের অদ্বয়-তত্ত্বেরই প্রতীক। তান্ত্রিক দর্শন অনুসারেও শিব এবং শক্তি স্বরূপত অভেদ্য।
ধর্মীয় বিচারে অর্ধনারীশ্বর মূর্তি-কল্পনার তাৎপর্য হল সাম্প্রদায়িক সমন্বয় ও সম্প্রীতি। শৈব ও শাক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের যে কোনো হেতু নেই, বরং নাম ও রূপ-ভেদে উভয় সম্প্রদায় যে একই সত্যের উপাসনায় ব্রতী, তা সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করার মানসে হিন্দুধর্মের প্রাচীন আচার্যগণ পরম দেবতার এই বিচিত্র রূপের কল্পনা করেছিলেন। তাঁদের হৃদয়ে ধ্যানের গভীরে এই তত্ত্ব এবং রূপের উপলব্ধি হয়েছিল : এক ঈশ্বর-অর্ধাঙ্গে তিনি নারী, অপর অর্ধাঙ্গে তিনি পুরুষ। এইভাবে তাঁরা বেদান্তের ব্রহ্ম-মায়া তত্ত্বের সঙ্গে সাংখ্যের পুরুষ-প্রকৃতি তত্ত্বের, বেদের পরমেশ্বর-পরমেশ্বরী তত্ত্বের সঙ্গে তন্ত্রের শিব-শক্তি তত্ত্বের সমন্বয়ের স্বর্ণসূত্রটিও আবিষ্কার করেছিলেন।