Increase Reset Decrease

অর্ধনারীশ্বর মূর্তির বর্ণনা

মৎস্যপুরাণে দেবগণের প্রতিমালক্ষণ বর্ণনা অধ্যায়ে (২৬০।১-১০) অর্ধনারীশ্বর মূর্তির এই বিবরণ পাওয়া যায় :

“অধুনা সম্প্রবক্ষ্যামি অর্ধনারীশ্বরং পরম্।
অর্ধেন দেবদেবস্য নারীরূপং সুশোভনম্।।
ঈশার্ধে তু জটাভাগো বালেন্দুকলয়া যুতঃ।
উমার্ধে চাপি দাতব্যৌ সীমন্ততিলকাবুভৌ।।....
অর্ধনারীশ্বরস্যেদং রূপমস্মিন্নুদাহৃদতম্।।”

-অধুনা দেবদেবের পরম অর্ধনারীশ্বর মূর্তির বিষয়ে বলছি। তাঁর অর্ধাংশে সুশোভন নারী রূপ বিরাজিত। তাঁর অর্ধাংশ ঈশমূর্তিতে বালচন্দ্র্র-কলাযুক্ত জটাভার এবং যে-অর্ধে উমামূর্তি তাতে সীমন্ত ও তিলক উভয় অর্পণ করতে হবে।....এটিই অর্ধনারীশ্বরের রূপ।

বায়ুপুরাণ (৯।৭৫-৮০) এবং ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে (৯।৭০-৭২) দেবাদিদেবের অর্ধাঙ্গে নর রূপে আবির্ভাব-প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। পদ্মপুরাণে (সৃষ্টিখণ্ড, ৫৬।৫৫-৫৬) বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মার যজ্ঞ-সমাপ্তির পর শিব ও পার্বতী ব্রহ্মা-পত্নী সাবিত্রীকে যজ্ঞষ্থানে আনয়ন করতে গেলে সাবিত্রী শিব ও পার্বতীকে একদেহ হওয়ার বরদান করেছিলেন :

“শরীরার্ধে চ তে গৌরী স্থাস্যতি শঙ্কর।
অনয়া শোভসে দেব ত্বয়া ত্রৈলোক্যসুন্দর।।”

পরবর্তী কালে রচিত কালিকাপুরাণে (নবম-দশম শতাব্দী) হর-গৌরীর অর্ধনারীশ্বর রূপ গ্রহণের যে-উপাখ্যান রয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, একদা গৌরী মহাদেবের হৃদয়ে এক নারীর ছায়া দেখে অত্যন্ত বিষণœ এবং ক্রুদ্ধ হন। মহাদেব তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, ঐ ছায়া অন্য নারীর নয়, ওটি গৌরীরই ছায়া। গৌরী সে-কথা শুনে আহ্লাদিত হয়ে নিজের দেহ মহাদেবের দেহে মিলিত করতে চাইলেন :

“যথা তবাহং সততং ছায়েবানুগতা হর।
ভবেয়ং সাহচর্যেণ তথা মাং কর্তুমর্হসি।।
সর্বগাত্রেণ সংস্পর্শং নিত্যালিঙ্গনবিভ্রমম্।।
অহমিচ্ছামি ভবতস্তত্ত্বঞ্চেৎ কর্তুমর্হসি।।”
(কালিকাপুরাণ, ৪৫।১৪৯-১৫০)

-হে হর, সতত সাহচর্যে যাতে আমি ছায়ার মতো তোমার অণুগত হতে পারি, তুমি তাই কর। তোমার সর্বগাত্রের (সর্বাঙ্গের) স্পর্শ এবং সিত্য আলিঙ্গন-সুখ যাতে আমি পাই, তুমি তাই কর।

মহাদেব বললেন : তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হবে। তুমি আমার অর্ধশরীর গ্রহণ কর। তাহলে আমার অর্ধশরীর নারী হবে, অর্ধশরীর হবে পুরুষ। তুমি যদি তোমার শরীর দুই অর্ধে বিভক্ত কর, তাহলে আমি তোমার অর্ধশরীর আমার শরীরে হরণ করে নেব।
দেবী বলেন : আমি তোমার অর্ধ দেহ গ্রহণ করে অবস্থান করব, কিন্তু যে-সময় সেই দেহার্ধ ত্যাগ করব সেইসময় উভয় দেব যেন পুনর্বার সম্পূর্ণ রূপ প্রাপ্ত হয়।
ঈশ্বর বাজি হলেন। উভয়ে উভয়ের অর্ধশরীর হরণ করলেন :

“একমস্তু ভবেন্নিত্যং যথার্ধং হর্তুমর্হসি।
শরীরস্যার্ধহরণং ভূয়স্তব যথেপ্সিতম্।।”

Print