
মহাবিদ্যা - বগলামুখী

দেবী সতীর ধূমাবতী মূর্তি দর্শনের পর ভীতসন্ত্রস্ত মহাদেব আবার চোখ ঢেকে “রক্ষা কর রক্ষা কর মহাদেবে” বলে পালাতে গিয়ে দেখলেন সে পথও রুদ্ধ করে বসে আছেন আর এক অভিনব দেবীমূর্তি, “মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপ রত্নবেদী সিংহাসনোপরিগতাং পরিপীতবর্ণাং। পীতাম্বরাভরণ মাল্য বিভূষিতাঙ্গীং দেবীং স্মরামি ধৃতমুদ্গর বৈরি জিহ্বাম্/জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং, বামেন শত্র“ন্ পরিপীড়য়ন্তীম্। গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।” অমৃতসাগরের মধ্যে মণিমণ্ডপ, তার উপর রত্নবেদী, সেই বেদীতে সিংহাসন। সেই সিংহাসনে দেবী বগলা উপবিষ্টা। তাঁর গায়ের রং হলদে। হলদে রং-এর কাপড়, সেই রং-এর অলঙ্কার, মাল্যে তিনি বিভূষিতা। তিনি একহাতে অসুরের জিভ ও অন্য হাতে গদা ধারণ করে আছেন। বাম হাতে তিনি শত্র“ অসুরের জিভ টেনে ধরে ডান হাতে তাকে গদা দিয়ে মারছেন। এই হলদে রং-এর কাপড় পরা হলদে রং-প্রিয়া দেবী বগলামুখীকে আমি পূজা-প্রণাম করি। ইনিই দেবী বগলামুখী। ইনিও তমোগুণ প্রধানা। ইনি জীবের দারিদ্র দুঃখরূপ অসুরের হাত থেকে জীবকে নিস্তার করেন। এই তন্ত্রোক্ত দেবীর কৃপায় জীবের জীবনের নানা অশুভ অশান্তি দূর হয়। এঁর অসুরের রং শ্যামল বর্ণের।
এঁর উৎপত্তি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তন্ত্রে সংক্ষেপে বলা হয়েছে-সত্যযুগে পৃথিবীর বিনাশের জন্য একবার প্রচণ্ড প্রলয়ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল, তাতে সৃষ্টিকর্তা বিষ্ণু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়ার শরণ নেন এই বিপদ থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করবার জন্য। ত্রিপুরাম্বিকা দেবী সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে একটি হলুদ রং-এর হ্রদ সৃষ্টি করে তার মধ্যে এক মঙ্গলবারে চতুর্দশী তিথিতে বীর রাত্রির মধ্যযামে জলক্রীড়ায় নিজের রূপ সৃষ্টি করেন ও ধরিত্রীকে রক্ষা করেন-ইনি বিষ্ণুতেজোময়ী দেবী-বগলামুখী। ইনি তন্ত্রের বিখ্যাত শক্তি মূর্তি-এঁর নামের অর্থ ব-কারে বারুণী দেবী, গ-কারে সিদ্ধিদায়িনী, ল-কারে পৃথিবী। ইনি পৃথিবীতে অসাধ্য-সাধনে অধিকারী। বগলামুখীর মন্ত্র জপ ও পুরশ্চরণে অসম্ভবও সম্ভব হয়। ঠিক ঠিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হলে পবনের গতি স্তব্ধ হয়, অগ্নি শীতল হয়, গর্বিতের গর্ব যায়, ক্ষিতিপতিও শংকিত হয়।