Increase Reset Decrease

মহাবিদ্যা - তারা

কালীর পরে যে মূর্তির দর্শন পান মহাদেব, তিনি তারা। তাঁর মূর্তির বর্ণনা-“নীলবর্ণা লোলজিহ্বা করালবদনা। সর্পবান্ধা ঊর্ধ্ব একজটা-বিভূষণা। অর্ধচন্দ্র পাঁচখানি শোভিত কপাল। ত্রিনয়নী লম্বোদরী পরা বাঘছাল। নীলপদ্ম খড়্গ ছুরি সমুণ্ড খর্পর। চারিহাতে শোভে- আরোহণ শিবোপর।” ইনি জীবকে বাক্শক্তি প্রদান করেন, তাই এঁর নাম নীল সরস্বতী, সকল জীবকে উদ্ধার-তারণ করেন, তাই ইনি তারিণী তারা। এঁর উৎপত্তি সম্বন্ধে বলা হয়েছে, চৈত্র মাসের শুক্লা নবমীতে কালরাত্রির দিনে স্বয়ং উগ্র আপদ থেকে জীবকে তারণ করেন, তাই ইনি উগ্রতারা। মেরুর পশ্চিমকূলে চোল বলে এক হ্রদে মায়ের আবির্ভাব। ত্রিযুগ ধরে ইনি সেখানে তপস্যা করেন, তারা সত্বগুণাত্মিকা তত্ত্ববিদ্যাদায়িনী।

তন্ত্রমতে-তাঁর ধ্যানমন্ত্র-
“প্রত্যালীড় পদাং ঘোরাং মুণ্ডমালা-বিভূষিতাম্।
খর্বাং লম্বোদরীং ভীমাং ব্যাঘ্রচর্মাবৃতা কটৌ।
নবযৌবনসম্পন্নাং পঞ্চমুদ্রা বিভূষিতাম্।
চতুর্ভুজাং লোলজিহ্বাং মহাভীমাং বরপ্রদাম্।
খড়্গ কর্ত্রী সমাযুক্ত সব্যেতর ভুজদ্বয়াম্।
কপাল উৎপল সংযুক্ত সব্যপানিদ্বয়ান্বিতাম্।
পিঙ্গোগ্রৈকজটা ধ্যায়েৎ।
মৌলী অক্ষোভ্য-ভূষিতাম্।
জ্বলচ্চিতামধ্যগতাম্ ঘোরদংষ্ট্রাং করালিনীং।
সাবেশস্মের বদনাং স্ত্র্যলঙ্কারভূষিতাম।
বিশ্বব্যাপক তোয়ান্তঃ শ্বেতপদ্মোপরিস্থিতাম্।
অক্ষোভ্য দেবীমূর্ধণ্যস্ত্রিমূর্তি নাগরূপধৃক।।”

তিনি বামচরণখানি সামনে নিয়ে দক্ষিণ চরণ পেছনে রেখে দণ্ডায়মানা, ভীষণদর্শনা-মুণ্ডমালা বিভূষিতা, খর্বাকৃতি, লম্বোদরী, কটিতে ব্রাঘ্রচর্ম। নবযৌবনা, লেলিহানাদি পঞ্চমুদ্রাধারিণী। চতুর্ভুজা, লোলজিহ্বা। মহাভয়ঙ্করী বরদাত্রী। তাঁর দক্ষিণ দুই হাতে খড়্গ ও ছোট কাতারী। বাম দুই হাতে নরকপাল ও নীল পদ্ম। মাথায় পিঙ্গলবর্ণের দীর্ঘ একটি জটা ও তাতে নাগরূপধারী অক্ষোভ্য ঋষি। জ্বলন্ত চিতা চারিপাশে। তাঁর দন্তপংক্তি অতি ভয়ানক। তিনি ভীষণা অথচ মধুর হাস্যবদনা। নানা অলঙ্কারে বিভূষিতা এই দেবী জগৎব্যাপী কারণ সলিলে শ্বেতপদ্মের ওপর দণ্ডায়মানা। ইনিই তারা বিদ্যা।

Print