
মহাবিদ্যা - কমলা

বগলামুখী মূর্তি দর্শনের পর মহাদেব এক অপূর্ব সুন্দরী মূর্তির দর্শন পেলেন-“কান্ত্যা কাঞ্চনসন্নিভাং হিমগিরি প্রখ্যৈশ্চতুর্ভি র্গজৈঃ। হস্তোৎক্ষিপ্ত-হিরন্ময়ামৃতঘটরাসিচ্যমানাং শ্রিয়ম্। বিভ্রানাং বরমব্জযুগ্মং অভয়ং হস্তৈঃ কিরীটোজ্জ্বলাং। ক্ষৌমাবদ্ধনিতম্ববিম্বললিতাং বন্দে অরবিন্দস্থিতাম্।” ইনি দেবী কমলা দশমহাবিদ্যার শেষতম অবতার মহাবিদ্যা।-এঁর গায়ের কাঁচা সোনার মতো রং-এ চতুর্দিক উজ্জ্বল। চারদিকে হিমালয়ের মতো চারটি বিরাট হাতি। তাদের শুঁড়ে ধরে রাখা কলস থেকে দেবীর মাথায় অমৃতবারিতে অভিষেক করা হচ্ছে। দেবীর চারটি হাতে দুটি পদ্ম ও বরাভয় মুদ্রা। মাথায় উজ্জ্বল রত্নমুকুট, পট্টবস্ত্র-পরিহিতা সুন্দর শরীর। রক্তবর্ণ কমলোপরি আসীনা দেবী কমলাকে আমি বন্দনা করি। ইনি মূর্তিমতী দয়া।
এঁর উৎপত্তি বহুখ্যাত একটি ঘটনায় জানা আছে। প্রাচীনকালে সমুদ্র মন্থনকালে এঁর উৎপত্তি। ক্ষীরোদ সমুদ্রজাতা ইনি। বিষ্ণু তাঁকে তাঁর বক্ষঃস্থলে স্থান দেন। পদ্মাসনা এই দেবীকে তাই পদ্মা-পদ্মালয়া এই সব নানা নামে ভূষিত করা হয়। ইনি ভাদ্রমাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে কোলাসুরকে বিনাশ করেন। এঁর আবির্ভাব ফাল্গুন মাসের একাদশী তিথি অথবা শুক্রবার বা মঙ্গলবারে যে তিথি হয় সেই তিথিতে সর্বসৌভাগ্যদায়িনী এই মহালক্ষ্মী দেবীর আবির্ভাব হয়। মহর্ষি দুর্বাসার অভিশাপে ইন্দ্রকে ও স্বর্গকে পরিত্যাগ করে ইনি সমুদ্রে আশ্রয় নেন। পরে দেবতা ও দৈত্যেরা সমুদ্রমন্থন করলে নানা মূল্যবান বস্তুর শেষে ইনি সমুদ্রের মধ্য থেকে উঠে এলে বিষ্ণু এঁকে গ্রহণ করে বৈকুণ্ঠে নিয়ে যান। স্বর্গ আবার লক্ষ্মীমন্ত হয়। ইন্দ্র তখন প্রণাম করে বলেন, “নমস্তে সর্বলোকানাম্ জননীং অব্ধি সম্ভবাম্। শ্রিয়মুন্নিদ্র পদ্মাক্ষীং বিষ্ণু বক্ষঃস্থলস্থিতাম্।”
দেবী কমলাকে দর্শন করে শিব একটু স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই দেবীমূর্তি অন্তর্হিতা হলেন। শুধু শুনলেন তাঁর দৈববাণী-“তুমি কি ভুলে গেলে আগেকার সব কথা-সেই পরমা প্রকৃতি আমি প্রসবিনু, তুমি বিষ্ণু বিধি তিনজনে। তিন জনে তোমরা কারণ সলিলে ভেসে যাচ্ছিলে। আমি তোমাদের ‘তপ-তপ-তপ’ এই আদেশ করেছিলাম। তোমরা তিনজনে এই মন্ত্র জপ করতে লাগলে। সেই সময় আমি শবদেহ রূপে ভাসতে ভাসতে তোমাদের কাছে এসেছিলাম। শবের পচা গন্ধ বিষ্ণু সহ্য করতে না পেরে তপস্যা ভঙ্গ করে উঠে গেল। ব্রহ্মা সেই শবের দিক থেকে মুখ চারদিকে ঘুরিয়ে নিতে নিতে চতুর্মুখ হয়ে গেল। আর তুমি ঘৃণা না করে আমাকে আপন করলে। প্রকৃতি রূপেতে তোমা করিনু ভজন। পুরুষ হইলে তুমি আমার ভজনে। সেই তুমি সেই আমি ভেবে দেখ মনে।” দেবী আরও বললেন, “যার তরে একার্নবে শক্তির সাধন; তার কথা করি অযতন কোথা যাও মহেশ্বর।”-(মহাভাগবতপুরাণ)
আত্মবিদ্ মহেশ্বর শক্তিতত্ত্ব উপলব্ধি করে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দেবীর দশটি বিগ্রহ স্মরণ করে তাঁকে দক্ষযজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে রথ প্রস্তুত করতে নন্দীকে আদেশ দিলেন। আর সেই “রথে চড়ি গেলা সতী দক্ষের মন্দিরে।”