Increase Reset Decrease

মহাবিদ্যা - মাতঙ্গী

ভয়ঙ্করী ছিন্নমস্তার মূর্তি দেখে শিব অন্য দিক দিয়ে পালাবার চেষ্টা করলে সেদিকেও আর এক মূর্তির আবির্ভাব হল। ইনি মাতঙ্গী। শিব দেখলেন এক অপূর্ব দেবী-“শ্যামাঙ্গীং শশিশেখরাং ত্রিনয়নাং রত্নসিংহাসনস্থিতাম্। বেদৈর্বাহুদণ্ডৈঃ অসিখেটকপাশাঙ্কুশধরাম্।” শ্যামবর্ণা অর্ধচন্দ্রধারিণী ও ত্রিনেত্রা। চারহাতে তরবারি, বর্শা (ঢাল), পাশ ও অঙ্কুশ ধারণ করে রত্নসিংহাসনে বসে আছেন। ইনি তমঃ প্রধানা।

 এই দেবীর উৎপত্তি বিষয়ে নারদপঞ্চরাত্রে বলা হয়েছে- এক সময় দেবী পার্বতী কৈলাসে শিবের ক্রোড়ে উপবিষ্টা আছেন। এমন সময় তাঁর বাপের বাড়ি থেকে মা মেনকা তাঁর নাতিকে-মৈনাক পর্বতের ছেলে ক্রৌঞ্চকে, কৈলাসে পাঠালেন তাঁর বাড়ির এক উৎসবে পার্বতী ও জামাই শিবকে নিমন্ত্রণ করতে। শিব পার্বতীকে বাপের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেন। নিজে যাওয়ার কথা কিচ্ছু বললেন না। দেবী পার্বতী বাপের বাড়ীতে গিয়ে উৎসবানন্দে মেতে আছেন। এই সময় শিব এক শঙ্খব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে সেখানে হাজির হয়ে সব মেয়েদের ভালো ভালো শাঁখা দিতে লাগলেন। পার্বতী শাঁখা চাইলে তাঁকে দিলেন না। বললেন, তোমাকে ভালো শাঁখা দিতে পারি, তবে আমি যা দাম চাইব তাই দিতে হবে। পার্বতী তাতেই রাজি হলে শঙ্খকার খুব সুন্দর এক জোড়া শাঁখা দেবীর হাতে পরিয়ে দিয়ে বললেন-“আমি নগাধিরাজ হিমালয়কন্যা-বিখ্যাত পর্বত মৈনাক আমার ভাই। গণপতি প্রভৃতি আমার সন্তান, সর্বোপরি কৃপাসাগর দেবাদিদেব মহাদেব আমার স্বামী সেই আমার কাছে তোমার এই প্রস্তাব! ত্রিজগতে আমাকে একথা বলতে কার শক্তি আছে? আমি তোমাকে অভিশাপ দেব।” কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে কী একটা সন্দেহ হল শঙ্খকারকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে। তখন দেবী চোখ বন্ধ করে একটু ধ্যান করতেই মহাদেবের লীলা ধরে ফেলে বললেন, “ঠিক আছে, আমাকেই পাবে যথাসময়ে।” পরে দেবী কিরাত বেশ ধরে শিব যেখানে সন্ধ্যা করছিলেন, সেই মানস সরোবরে গিয়ে হাজির হলেন কিরাতবেশী সখীদের সঙ্গে নিয়ে। রক্তবর্ণা রক্তবস্ত্র পরিধানা উদ্ভিন্নযৌবনা কিরাতরূপিণী দেবীকে দেখে শিব মুগ্ধ হলেন। তাঁকে বরণ করতে চাইলেন। দেবী তখন বললেন, “আমি চণ্ডালী, তপস্যার জন্য এখানে এসেছি। আমি দেবত্ব লাভ করতে চাই। আমার তপোবিঘœ করবেন না।” মহাদেব বললেন, “আমি দেবতা শিব, তপস্বীদের ফল আমিই দান করি। তুমি আমাকে খুশি করলে তোমাকে আমিই পার্বতীর মতো করে দিতে পারি।” তখন চণ্ডালবেশী দেবী মহাদেবকে প্রণাম করায় মহাদেব তাঁর হাত ধরলেন ও কাছে এনে বসালেন ও নিজে চণ্ডালরূপ ধারণ করে দেবীর সঙ্গে আনন্দে মগ্ন হলেন। দেবী তখন বললেন, “কোনোভাবেই আমি আপনাকে ছলনা করতে পারলাম না। আপনি জগৎপতি। আমার এই ছদ্মবেশ ধরে ফেলে আমাকে সঙ্গদানে কৃপা করলেন। এখন আমাকে বর দান করুন।” শিব বললেন, তুমি চণ্ডালিনীর বেশে আমার সঙ্গে মিলিত হয়েছ, তাই তমপ্রধানা তোমার শ্যামবর্ণা হবে। তোমার নাম হবে উচ্ছিষ্ট চাণ্ডালিনী, সব শক্তিপূজার শেষে তোমার পূজা না করলে সে পূজা সিদ্ধ হবে না। আর সেখানে আমার পূজার নাম হবে চণ্ডেশ্বর। আর এই রূপে তুমি হবে মাতঙ্গীনামা দেবী। কালিকা বগলা সর্বসিদ্ধবিদ্যার মতো তুমিও হবে মহাবিদ্যা।”

এ প্রসঙ্গে আরও একটি তন্ত্রে বলা হয়েছে- কোনো এক সময় এক কদম্বকাননে সকল ভূত বশের জন্য মতঙ্গ বলে এক ঋষি দীর্ঘদিন তপস্যা করছিলেন। তাঁর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে দেবী আদ্যাশক্তি ত্রিপুরসুন্দরীর নেত্র থেকে অতুল তেজ সমুৎপন্না হয়ে এক অপরূপা শ্যামবর্ণা অম্বিকা-কালিকা দেবীর সৃষ্টি হল। তিনি মতঙ্গ মুনিকে সিদ্ধি দান করে রাজ মাতঙ্গী এই নামে খ্যাত হন।

 

Print