Increase Reset Decrease

মহাবিদ্যা - ধূমাবতী

মাতঙ্গী মূর্তি দর্শন করে মহাদব কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে আবার যেই পালাবার পথ খুঁজছেন তখন আবার দেখলেন এক বিচিত্র দেবীকে। “বিবর্ণা চঞ্চলারুষ্টা দীর্ঘা চ মলিনাম্বরা। বিমুক্তকুন্তলারুক্ষা বিধবা বিরলদ্বিজা। কাকধ্বজরথারূঢ়া বিলম্বিত পয়োধরা। শূর্পহস্তা অতিরুক্ষাক্ষী ধৃতহস্তা বরান্বিতা। ক্ষুৎ পিপাসার্দিতা নিত্যং ভয়দা-কলহাস্পদা।” এক কাকধ্বজরথে বসে থাকা দেবী যাঁর গায়ের রং ফ্যাকাসে। চঞ্চলা ক্রুদ্ধা দীর্ঘদেহা, মলিনবস্ত্র পরিহিতা স্বামীহীনা দন্তহীনা, শিথিলস্তনা নারীমূর্তিকে দেখলেন। তাঁর হাতে কুলো, চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত তীব্র, অন্য হাতে কম্পমান বরমুদ্রা। ক্ষুধা তৃষ্ণায় তিনি সর্বদা কাতর, ভয়ঙ্করী এই মূর্তি কলহপ্রিয়া। এই দেবীকে দেখে শিব বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন, তাঁর পত্নী সতীর জায়গায় এ কোন বৃদ্ধা জরাগ্রস্তা বিধবা কোপনস্বভাবা মূর্তি!

এই তমঃপ্রধানা দেবী হচ্ছেন ধূমাবতী। এঁরও সৃষ্টি সম্পর্কে এক পূরাণে বলা হচ্ছে-একদিন কৈলাসে শিব বসে আছেন, এমন সময়ে তাঁর কোলে বসে থাকা গিরিজা বাচ্চা মেয়ের মতো বলে উঠলেন, আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে-শিগ্গির কিছু খেতে দাও।” এই কথা শুনে মহাদেব বললেন, “একটু অপেক্ষা কর তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।” একটু পরেই দেবী আবার বললেন, “দাও, দাও, আমার যে খুব ক্ষিধে পেয়েছে।” শিব আবার বললেন, “লক্ষ্মীসোনা, একটু অপেক্ষা কর, এই দিচ্ছি।” দেবী তখন বললেন, হে জগন্নাথ দেরি করবার ক্ষমতা আমার আর নেই।” এই বলে শিবকেই তুলে নিয়ে নিজের মুখের মধ্যে ফেলে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সারা শরীর থেকে ধোঁয়া (ধূম) বেরোতে লাগল। তখন মহাদেব তাঁর যোগশক্তিতে দেবীর শরীর থেকে বাইরে এসে বললেন, “পশ্য ভদ্রে মহাভাগে পুরুষো নাস্তি মাং বিনা। ত্বদন্যা বনিতা নাস্তি পশ্যত্বং জ্ঞানচক্ষুষা। বিধবাসি কুরু ত্যাগং শঙ্খসিন্দুরমেব চ। সাধব্যং লক্ষণং দেবী কুরু ত্যাগং পতিব্রতে। ধূম ব্যাপ্তশরীরাত্তু ততো ধূমাবতী স্মৃতা।” হে শোভনে, ধ্যানযোগে দেখ, আমা ছাড়া আর পুরুষ নেই আর তুমি ছাড়া কোন স্ত্রী নেই। কিন্তু আমাকে গ্রাস করে তুমি বিধবা হয়েছ, তাই সধবার চিহ্ন শাঁখা সিন্দুর, পতিব্রতার চিহ্ন তুমি ত্যাগ কর। আর সমস্ত শরীর ধূমে পূর্ণ হওয়ায় তোমার নাম হল ধূমাবতী।

আর এক তন্ত্রের মতে বরা হচ্ছে দক্ষযজ্ঞে পতিনিন্দা শ্রবণে সতী দেহত্যাগ করেছিলেন নিজের দেহ থেকে কোপাগ্নি সৃষ্টি করে। সেই অগ্নিময় দেহ ধূমে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। সেই তিথিটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া-মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায়। তাই তন্ত্রে বলে দেবী ধূমাবতীর সৃষ্টি-“প্রাপ্তে অক্ষয় তৃতীয়ায়াং জাতা ধূমাবতীশিবে। কালী-কালী কালবক্ত্রা ভৌমবারে নিশামুখে।” এই মূর্তি সর্বশত্র“বিনাশিনী। আবার এক কবি বলেছেন, “বিমুক্ত কেশী বামা জীবদুঃখ বিনাশে/শ্রমক্লান্ত প্রাণী ক্লেশ, ঘুচাইতে রুক্ষবেশ বিধবার রূপে নিত্য সতীহোতা বিকাশে।” হাতে কুলো-তার বাতাসে জীবের সব বিপদ আপদ শত্র“ সব দূর করে দেবেন তিনি। ভীতিপ্রদা মূর্তিও জীবের দুঃখনাশে সদা প্রস্তুত।

 

Print