প্রাণ-সম ভ্রাতা তার নিহত সমরে।
কুপিত দারুণ দৈত্য নানা মূর্ত্তি ধরে।।
বলে দৈত্য অয়ি দুর্গে হইয়ে অবলা।
অপরের সহায়তা লয়ে কর ছলা।।
পারো যদি যুদ্ধ কর একা মোর সনে।
বুঝিব তোমার শক্তি অয়ি ত্রিনয়নে।।
শুনিয়া দৈত্যের বাণী কহিছে ভবানী।
বীর হয়ে মূর্খ সম কেন হেন বাণী।।
যাহা দেখ মাতৃগণ বিভূতি আমার।
আমারই খণ্ডিত মূর্ত্তি আমি সর্ব্বসার।।
আমার বিভূতি বলে সবারে সংহারি।
বিধ্বংস করিব আমি যত অমরারি।।
রুষ্ট হয়ে সগর্জ্জনে কহে দৈত্যবর।
বিভূতি সহিত দুষ্টা যাও যমঘর।।
অতঃপর পুনঃ যুদ্ধ চলিল ভীষণ।
ভয়াবহ মহাশব্দে কাঁপে রণাঙ্গন।।
শত অস্ত্র নিক্ষেপিল দেবী দৈত্য ’পরে।
নিমিষে বিছিন্ন করে অসুর-নিকরে।।
অসুরের দিব্য অস্ত্র দেবী করে ছিন্ন।
মহাশব্দে ধায় অস্ত্র নিমেষে নিশ্চিহ্ন।।
দেবীরে বেড়িল দৈত্য দিব্য শরজালে।
তা’ সবে করেন ছিন্ন দেবী অবহেলে।।
হানিল দারুণ শেল কালদণ্ড সম।
সূর্য্যকর সম জ্বলে দীপ্তি অনুপম।।
আসিছে ধাইয়া শেল পবনানুপাতে।
ছিন্ন করিলেন দেবী ভীম চক্রাঘাতে।।
অতঃপর খড়গ লয়ে কৃতান্ত সমান।
দেবীর উপরে দৈত্য হানে খরশান।।
শূন্যমার্গে তীক্ষ্ণ খড়গ বিচূর্ণিত হয়।
সহস্র শাণিত অস্ত্র দেবী নিক্ষেপয়।।
অঙ্গত্রাণ বর্ম্ম চর্ম্ম ছেদি অবহেলে।
ধনুঃ রথ সারথিরে কাটি ভূমে ফেলে।।
এ সকল হারাইয়া রুষি অমরারি।
মুদগর করেতে লয়ে আসে আগুসারি।।
তীক্ষ্ণ শরে সে মুদগর দেবী ছিন্ন করে।
মুহুর্মুহুঃ অস্ত্রাঘাতে দৈত্যেরে জর্জ্জরে।।
তথাপি দুর্জ্জয় দৈত্য মুষ্টি উত্তোলিয়া।
দেবী পানে ধেয়ে আসে ক্রোধান্বিত হৈয়া।।
দেবীর হৃদয়ে মুষ্টি হানে দৈত্যবর।
দেবীও চপেটাঘাত করয়ে সত্বর।।
আঘাতে আহত দৈত্য ভূতলে পড়িল।
পুনঃ সচেতন হয়ে নিমেষে উঠিল।।
শূন্য মার্গে উঠি দৈত্য দেবীরে লইল।
সেখানে রইয়া দেবী যুঝিতে লাগিল।।
ভুজযুগে ধরি দৈত্যে বিষম বলেতে।
আছাড়িয়া ফেলে দেবী ধরণী ’পরেতে।।
পুনর্ব্বার মুষ্টি তুলি ধায় দৈত্যবর।
তীক্ষ্ণশরে বিদ্ধ দেবী করিল সত্বর।।
অতঃপর পড়ে দৈত্য তীক্ষ্ণ শূলাঘাতে।
কাঁপে পৃথ্বী গিরি বন সমুদ্র সহিতে।।
দুষ্ট দৈত্য হত হল সুপ্রসন্ন ধরা।
শান্তি লভে সর্ব্বজীব চিদানন্দ ভরা।।
তুষ্ট হয়ে হৃষ্ট হয়ে যত দেবগণ।
শূন্যমার্গে হয় সব আনন্দে মগন।।
গাহিল গন্ধর্ব্বগণ নর্ত্তকীরা নাচে।
উল্লসিত ত্রিভূবন শুম্ভ-ত্রাসে বাঁচে।।
নিশ্চিন্ত হইল সবে দেবীর কৃপায়।
নিজস্থানে প্রতিষ্ঠিত সুরগণ হয়।।
-ইতি শুম্ভ বধ। |