Increase Reset Decrease

পদ্যচণ্ডী - দ্বাদশঃ অধ্যায়ঃ

দ্বাদশঃ অধ্যায়ঃ
ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ।
ভগবতীবাক্য

অতঃপর দেবী কহে করুণ বচনে।
তুষিবে আমায় নিত্য মধুর স্তবনে।।
মধু ও কৈটভ দৈত্য বধ নিবন্ধন।
মহিষ অসুর বধ যে করে কীর্ত্তন।।
শুম্ভ নিশুম্ভের নাশ আদি বিবরণ।
যে করে সভক্তি মনে নিয়ত সাধন।।
তার সর্ব্ব অকল্যাণ দূরীভূত হবে।
নিত্যকাল সেই মোর স্নেহাশ্রয়ে রবে।।
অষ্টমী নবমী আর তিথি চতুর্দ্দশী।
যে করে কীর্ত্তন মোর এক চিত্তে বসি।।
অথবা শ্রবণ করে যদি কোন জন।
আমার মাহাত্ম্য-কথা শান্তি প্রস্রবণ।।
অরিকুল ধ্বংস হবে তাদের ত্বরায়।
সঙ্কটে লভিবে ত্রাণ মম করুণায়।।
দারিদ্র-দুঃখেতে তারা কষ্ট নাহি পাবে।
শত্রু-দস্যুভয় কভু তাদের না রবে।।
অস্ত্রাঘাত বহ্নিদান জলে নিমজ্জন।
নাহি হয় তাহাদের কভু সম্ভবন।।
অতএব ভক্তিমনে মাহাত্ম্য আমার।
যে পড়ে তাহারে করি করুণা অপার।।
রোগ ভয় মহামারী আদি যাবে দূরে।
লক্ষ্মী বিরাজিবে সদা তার অন্তপুরে।।
পূজাকালে হোম যজ্ঞ মহামহোৎসবে।
বলিদানে এ মাহাত্ম্য শ্রবণিবে সবে।।
শরতে শারদা পূজা হইবে যখন।
আমার করিলে হেন মাহাত্ম্য কীর্ত্তন।।
সর্ব্বব্যাধি সর্ব্বপাপ দূরগত হয়।
ধ্যানে ধনে সুতবান্‌ সেই জন রয়।।
শত্রুগণ মিত্র হবে দুঃখ দূরে যাবে।
সর্ব্ব কর্ম্মে সিদ্ধি তবে সেজন লভিবে।।
দীর্ঘায়ু নীরোগ হবে কুলের সমৃদ্ধি।
অচিরায় হইবেক কুলমান বৃদ্ধি।।
দুঃস্বপ্নে অথবা মৃত্যুভয়ে সেই জন।
আমার মাহাত্ম্য-কথা করিবে শ্রবণ।।
সর্ব্বব্যাধি সর্ব্বভয় নাশি অচিরায়।
সুকল্যাণ শান্তিদান করিব তাহায়।।
ভূতপ্রেত হতে তার ভয় নাহি রবে।
সমরে অজেয় হবে বীর্য্যবান্‌ সবে।।
দৈত্যের বিনাশ কথা করিলে শ্রবণ।
শত্রুভয় দূরে যাবে সত্য এবচন।।
সেই ভাবে স্তব করি অমর-নিকর।
চতুম্মুখে চতুর্ম্মুখ স্তবে নিরন্তর।।
বিধি বিষ্ণু প্রজাপতি স্তবিল আমায়।
করিলে যে স্তব মোর দূরীভূত ভয়।।
পঠিলে সুমতি লভে মানব-নিকর।
অচিরায় শান্তি লভে তাপিত অন্তর।।
দস্যু-পরিবৃত যদি অরণ্য ভিতর।
অথবা আক্রমে তোমা শ্বাপদ-নিকর।।
নরপতি যদি দেয় বধের আদেশ।
অথবা বন্ধন আজ্ঞা দেয় সবিশেষ।।
সমুদ্রের বক্ষে যদি পোতে অবস্থান।
উত্তাল তরঙ্গ ক্ষুব্ধ পর্ব্বত সমান।।
অথবা পীড়িত হয় দুরারোগ্য রোগে।
মৃত্যু উপস্থিত হয় যদি দৈবযোগে।।
আমার মাহাত্ম্য-কথা যদি কেহ স্মরে।।
সর্ব্ব দুঃখ বাধা ব্যাধি দূরে যাবে সরে।।
অশান্ত সমুদ্র হবে শান্ত কলেবর।
পলাইবে দস্যুগণ অরণ্য-ভিতর।।
দুঃস্বপ্ন আতঙ্কে নৃপ ফিরাবে আদেশ।
কহিনু যে সত্য কথা সত্য এ সন্দেশ।।
কহিতে কহিতে দেবী অন্তর্হিতা হৈল।
দেবগণ স্বীয় স্থানে প্রস্থান করিল।।
হইয়া নিঃশঙ্ক চিত্ত যতেক অমর।
পূর্ব্বমত স্বীয় কার্য্যে রত অনন্তর।।
যজ্ঞভাগ পেয়ে হল পরিতৃপ্ত সুর।
দেবীর মাহাত্ম্য-স্তব করিল প্রচুর।।
মহাবীর্য্য ধবংসরূপ সেই দৈত্যদ্বয়।
শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে অসুর নিচয়।।
সমরে পতিত দেবী যত দৈত্যগণ।
মহাভয়ে পাতালেতে করে পলায়ন।।
এইভাবে পুনঃ পুনঃ শুনহে নৃপতি।
সমুদ্ভূতা হল দেবী কহিনু সমপ্রতি।।
জননী সে বিশ্বধাত্রী পালনের ধরণী।
শিষ্ট-পালনিকা মাতা দুষ্টের দলনী।।
দেবীমুগ্ধ জগতের যত জীবগণ।
ভক্তিভরে করি সবে দেবীর স্তবন।।
ব্রহ্ম-অণ্ড পরিবৃতা দেবী মহেশ্বরী।
পালন করেন যত্নে জগত-ঈশ্বরী।।
করাল বদনা কালী প্রলয়রূপিণী।
মূত্তিমতী মহামারী বিধবংসকারিণী।।
ব্যাপ্ত হয়ে চরাচরে তমিস্রস্বরূপা।
প্রদানিচ্ছে নিদ্রা শান্তি পরিতৃপ্তিরূপা।।
লক্ষ্মীরূপে গৃহে রন জগৎ-ঈশ্বরী।
শুভবুদ্ধিরূপে রাজে অম্বিকা সুন্দরী।।
সৃষ্টিরূপে সনাতনী চরাচরময়।
বিশ্ববন্দনীয়া দেবী মমতা তনময়।।
সুরলোক বিহারিণী জননী ভবানী।
পঞ্চমুখে ভজে তাঁরে দেব শূলপাণি।।
বিত্তরূপা চিত্তরূপা আনন্দরূপিণী।
সর্ব্বভূতসত্ততা দেবী মঙ্গলদায়িনী।।

-ইতি ভগবতীবাক্য



Print