মার্কণ্ড বলিলেন-যতেক বলিনু তোমা শুনিলে নৃপতি।
দেবীর মাহাত্ম্য-কথা কহিনু সসপ্রতি।।
অপূর্ব্ব এসব তত্ত্ব শুনিলে শ্রবণে।
চিত্তমাঝে জন্মে প্রজ্ঞা সাধু সুধীজনে।।
তুমি নৃপ আর বৈশ্য মাহাত্ম্য শুনিয়া।
হইলে অতীব মুগ্ধ সার্থক বলিয়া।।
নিজেদের জনমেরে করিলে আখ্যাত।
সেই দেবীপদে নৃপ কর প্রণিপাত।।
এই কথা নৃপ তবে শুনিয়া শ্রবণে।
বৈশ্য সহ তপস্যায় চলিল নির্জ্জনে।।
অনুতপ্ত হল নৃপ নিজ কীর্ত্তি স্মরি।
পূজা করে দুই জনে দেবীমূর্ত্তি গড়ি।।
নদীতীরে থাকি দোঁহে অম্বা দরশিতে।
কঠিন তপস্যা করে দিবসে ও রাতে।।
ধূপ পুষ্পে গন্ধে দীপে তর্পণ করিয়া।
নানাবিধ পুজা করে ভক্তিযুক্ত হৈয়া।।
অনাহারে অর্দ্ধাহারে করিছে স্তবন।
গাত্রে ঘাত হানি করে শোণিত তর্পণ।।
বর্ষত্রয় আরাধনা করিল উভয়ে।
মহাদেবী সিদ্ধেশ্বরী পরিতৃপ্তা হয়ে।।
আবির্ভূতা হইলেন তথায় নির্জ্জনে।
প্রার্থনা করহ বর যাহা লয় মনে।।
তবে নৃপ দেবী পাশে করেন প্রার্থনা।
বর যদি দাও দেবী অয়ি সুলোচনা।।
কৃপা করি তবে মোরে দেহ এই বর।
পরজন্মে রাজ্য পাই নহে যা নশ্বর।।
পরাক্রান্ত শত্রুবল হেন রাজ্য নহে।
অনাক্রান্ত মোর রাজ্য সদা যেন রহে।।
বৈশ্যের নন্দন তবে মাগে এই বর।
আমার আমিত্ব নাশি দেহ মা সত্বর।।
সংসারে পরম জ্ঞান দেবী যা দুর্ল্লভ।
কামাদি সকল রিপু মানে পরাভব।।
দেবী বলিলেন তবে শুনহ নৃপতি।
কতিপয় দিনে রাজ্য পাইবে সংহতি।।
শত্রুনাশ করি রাজ্য সুখেতে ভুঞ্জিবে।
জীবনান্তে সূর্য্যলোকে প্রস্থান করিবে।।
তারপর সূর্য্য হতে পুনশ্চ জনমি।
সাবণিক নামে মনু খ্যাত হবে তুমি।।
বৈশ্যবর তুমি যাহা প্রার্থনা করিলে।
শ্রেষ্ঠবর মাগি বৎস তুমি আজ নিলে।।
হইবে তোমার মুক্তি অতীব সত্বর।
লভিলে দেবত্ব তুমি হে অবিনশ্বর।।
কহে মার্কণ্ডেয় কবে বর দিয়া মাতা।
চক্ষুর পলকে দেবী হন অন্তর্হিতা।।
করিল তখন পূজা তাঁরে সাড়ম্বরে।
গন্ধে দীপে চন্দনেতে প্রফুল্ল অন্তরে।।
দেবীর প্রসাদ লভি সুরথ রাজন্।
মনুরূপে সূর্য্য হতে হবে সম্ভবন।।
-ইতি দেবীমাহাত্ম্য সমাপ্ত। |