অমরারি মহিষের দেখিয়া পতন।
যমদ্বারে নীত দেখি তার সৈন্যগণ।।
শক্র আদি দেবগণ করে দেবী-সত্ততি।
রটিল অমর কীর্ত্তি করিয়া প্রণতি।।
হরিহর বিভাবিনী তুমি মা জননী।
দেবতেজ সমুদ্ভূতা মহিষমর্দ্দিনী।।
তুমি মা অচিন্ত্যরূপা পরমকারণী।
সৃষ্টি-রক্ষা-কারণী মা বিপদবারিণী।
বৈরীনাশা মহাদেবী ত্রিগুণধারিণী।
সুকল্যাণী তুমি মাতঃ মঙ্গলকারিণী।।
প্রণমি তোমায় মাগো মোক্ষদা জ্ঞানদা।
সারদা তুমি যে দেবী তুমি মা প্রণদা।।
তোমার অতুল শক্তি কে পারে বর্ণিতে।
চতুর্ম্মুখে চতুর্ম্মুখ না পারে কহিতে।।
নিখিল পালিকা দেবী জননীরূপিণী।
প্রমদা প্রলয়ঙ্করী অশুভনাশিনী।।
সর্ব্বদেব দেহরশ্মি সর্ব্বতেজ সার।
হে বিপুলা কি বর্ণিব মহিমা অপার।।
তুমি লক্ষ্মী, তুমি স্থিতি, প্রজ্ঞা তুমি হও।
অলক্ষীরূপেতে তুমি দুষ্টঘরে রও।।
সাধুর হৃদয়ে কর শ্রদ্ধারূপে বাস।
অসাধুরে কর মাগো অচিরেই নাশ।।
সর্ব্বাশ্রয়া তুমি মাতঃ জগৎপালিকা।
বৈরিনাশে তুমি মাগো করাল কালিকা।।
তুমি সৃষ্টি তুমি স্থিতি প্রলয়কারিণী।
বিশ্বমূলে বিশ্বধাত্রী অসুরঘাতিনী।।
এ বিশ্বের হেতু তুমি, তুমি সারাৎসার।
গুণার্ণবা কে বর্ণিবে মহিমা তোমার।।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে ত্রিগুণরূপিণী।
পরমাপ্রকৃতি অদ্যাস্বরূপিনী।।
তুমি স্বাহা সুরতৃপ্তি তোমার কারণ।
তুমি স্বধা পিতৃলোকে এমত কথন।।
তুমি ঋদ্ধি তুমি সিদ্ধি তুমি জ্ঞানদাত্রী।
অসুরনাশিনী দেবী তুমি কালরাত্রি।।
ব্রহ্মলোকে তুমি মাগো সাবিত্রী জননী।
তুমি লক্ষ্মীনারায়ণহৃদিবিহারিণী।।
তুমি উমা শঙ্করের দয়িতা সুন্দরী।
তুমি ক্ষমা সর্ব্বলোকে পূজিতা ঈশ্বরী।।
তুমি গতি তুমি জ্যোতি সবিতৃমণ্ডলে।
তুমি স্নিগ্ধা মহালক্ষী তুমি ভূমণ্ডলে।।
প্রসীদ পরমা তুমি, তুমি সুমঙ্গলা।
তুমি স্থির তুমি মাগো চঞ্চলা চপলা।।
লাস্যময়ী হাস্যময়ী আনন্দরূপিণী।
চক্রধর মনোরমা তুমি মা চক্রিণী।।
দুর্দ্ধর্ষ মহিষ আর তার সৈন্য ল’য়ে।
ক্ষণেকে প্রেরিলা মাগো রবিসুতালয়ে।।
তুমি যারে কর কৃপা ধন্য সেই সুধী।
বীর্য্যবান ভাগ্যবান যশের অম্বুধি।।
তোমা বিনা সিদ্ধি নাই সর্ব্বার্থসাধিকে।
পরিত্রাণ-পরায়ণে পূজ্যা দিকে দিকে।।
তোমার প্রসাদ বিনে দেবী সুরাশ্রয়ে।
জীবনে কি ফল দেবী সর্ব্বগুণময়ে।।
দুর্গমে তুমি মা হর শঙ্কা সকলেরে।
তুমি দুর্গা শরণ্যা মা যত দুর্গতেরে।।
দয়ার্দ্রা করুণাময়ী তুমি বিশ্বমাতা।
তোমার করুণা যাচে আপনি বিধাতা।
তব হস্তে বিনষ্ট যে অসুর-নিচয়।
পবিত্র হইয়া স্বর্গে আসিবে নিশ্চয়।।
বরাননে, তব মুখ হেরি অমরারি।
দিব্যনেত্র লভিল যে মুক্তি পেল অরি।।
কি দিব উপমা তব তুমিই উপমা।
চিরারাধ্যা দেবী তুমি তুমিই অসীমা।।
উগ্রচণ্ডা উগ্ররূপে তুমি দিব্যজ্যোতি।
তুমি উন্নতিদা দেবী তুমিই প্রগতি।।
সুরালোকে অধিষ্ঠাত্রী বিশ্বের বন্দিতা।
যশোরূপা মূর্ত্তিমতী শ্রীহরি-নন্দিতা।।
অজিতা অপরাজিতা মহাশক্তি তুমি।
জগৎবরেণ্যা দেবী তোমারে প্রণমি।।
বিশ্বলোক-বিহারিণী তুমি মা তাপসী।
তুমি দিবা তুমি রাত্রি সন্ধ্যা উষসী।।
শক্রভয় অপগত তব করুণায়।
করুণার পক্ষপুটে রাখ সবাকায়।।
বিধি বিষ্ণু প্রপূজিত তুমি মাগো রমা।
তমিস্র বিদারি রূপ পূর্ণজ্যোতি সমা।।
সুরার্চ্চিতা দিব্যরূপা তুমি কৃপাময়ী।
যমভয় নিবারণী শ্রেয়া শক্তিত্রয়ী।।
এতমত স্তবসত্ততি শুনিয়া শ্রবণে।
চন্দন প্রসূন আদি সুগন্ধ লেপনে।।
তুষ্ট দেবী সুপ্রসন্না কহেন তপন।
নন্দিতা অলকনন্দা মধুর বচন।।
শোনহ অমরবৃন্দ তুষ্ট আমি স্তবে।
কি অভীষ্ট দেবগণ কহ মোরে সবে।।
অবশ্য পূরাব আমি বাঞ্ছা সবাকার।
করহ প্রার্থনা, বর দানিব অপার।।
তবে যত দেববৃন্দ প্রার্থনা করিল।
নিহত হইল শক্র অভীষ্ট পূরিল।।
তবে যদি বর দাও আমা সবাকায়।
এক বর করি মাগো প্রার্থনা তোমায়।।
বিপদে ও সঙ্কটেতে স্মরিলে তোমায়।
রক্ষণ করিও মাগো আমা সবাকায়।।
এ ভাবেতে স্তবে যদি তোমা মর্ত্ত্যবাসী।
রক্ষণ করিও তবে সর্ব্বভয় নাশি।।
দারা পুত্র পরিজন ধনাদি রক্ষিয়া।
লালন করিও মাগো কল্যাণী হইয়া।।
এত যদি দেবগণ প্রার্থনা করিল।
‘তথাস্তু’ বলিয়া দেবী অন্তর্হিতা হ’ল।।
কহিনু তোমায় নৃপ দেবীর বৃত্তান্ত।
কেমনে দেবীর জন্ম, স্মরিলে কৃতান্ত।।
অবশ্যই দূরে যায়, সর্ব্বপাপ হরে।
এ কাহিনী স্মর সভক্তি অন্তরে।।
শুম্ভ ও নিশুম্ভ দৈত্যে বিনাশ কারণ।
গৌরীরূপে করিলেন জনম গ্রহণ।।
তাহার চরিত্র কথা বর্ণিব এখন।
ভক্তিভরে নৃপবর করহ শ্রবণ।।
-ইতি শক্রাদি স্তুতি। |