Increase Reset Decrease

পদ্যচণ্ডী - নবমঃ অধ্যায়ঃ

নবমঃ অধ্যায়ঃ
ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ।
নিশুম্ভ বধ

রক্তবীজ বীজ-বধ-কথা শুনিয়া রাজন্‌।
চাহিল শুনিতে আরো অপূর্ব্ব কথন।।
বিস্তারি বলহ মোরে বিচিত্র কাহিনী।
শুনিয়া ভীষণ কৌতূহল মনে গণি।।
ঋষি বলিলেন তবে শুনহ নৃপতি।
শুম্ভ নিশুম্ভের কথা কহিব সমপ্রতি।।
রক্তবীজ হত হলে দুষ্ট দৈত্যদ্বয়।
দেবীর উপরে ক্রুদ্ধ হল অতিশয়।।
নিশুম্ভ ধাইল রণে দেখিতে ভীষণ।
দেবী সনে আরম্ভিল ঘোর মহারণ।।
লয়ে শ্রেষ্ঠ সৈন্যদল ভীম দরশন।
নিক্ষেপিল লক্ষ লক্ষ আয়ুধ ভীষণ।।
মুহুর্মুহুঃ শরবৃষ্টি শূন্য অন্ধকার।
বজ্রনাদে উভে উভে করিল প্রহার।।
মহারাবে দেবী তবে নিক্ষেপিল শর।
লক্ষ লক্ষ শত্রুসৈন্য নাশিল বিস্তার।।
লইয়া শাণিত খড়্গ সূর্য্যরশ্মি সম।
দীপ্তিমান ঢাল লয়ে যুঝে অনুপম।।
নিশুম্ভ সে মহাসুর অতি ভয়ঙ্কর।
মহাবীর্য্য মহাদৈত্য করিছে সমর।।
সম্মুখে দেখিয়া তবে দেবীর বাহনে।
খরশান মহাখড়্গ তদুপরি হানে।।
সহসা হাসিল দেবী সুরেশ্বরী।
খড়্গ চর্ম্ম ছিন্ন করে অস্ত্রাঘাত করি।।
ছিন্ন হেরি খড়্গচর্ম্ম ক্রোধে অমরারি।
নিক্ষেপিল শক্তি-অস্ত্র দেবীর উপরি।।
মহাদ্যুতি শক্তি-অস্ত্র আসে দেবী-প্রতি।
দরুণ প্রভায় ধেয়ে আসে শীঘ্রগতি।।
স্বর্গ হতে সুরগণ ভয়ে হয় ম্লান।
চক্র হানি শক্তি দেবী কৈল খানখান।।
রুষিয়া দারুণ দৈত্য শূল লয়ে করে।
ধেয়ে আসে মহাক্রোধে হানে দেবী’পরে।।
আগত দেখিয়া শূল দেবী মুষ্টি হানি।
বিচূর্ণ করিল শূল, ফেলি দিল টানি।।
ঘূর্ণিত গদারে লয়ে দৈত্য নিক্ষেপয়।
ত্রিশূল হানিয়া দেবী ভস্ম করে তায়।।
পরশু হস্তেতে ধেয়ে আসে দৈত্যবর।
বাণেতে আহত করি ফেলে ভূমি ’পর।।
নিহত হইল দৈত্য নিশুম্ভ পতন।
দেখিয়া রুষিল দৈত্য শুম্ভ সে ভীষণ।।
রথে আরোহিয়া দৈত্য আয়ুধ-সজ্জিত।
ভীম নাদ করি রণে হৈল উপনীত।।
অষ্টভূজ মহাদৈত্য আসে মহারণে।
দিব্য অলঙ্কার আদি সজ্জিত ভূষণে।।
দৈত্য সমাগম দেখি দেবী শঙ্খনাদে।
ঘণ্টারবে কত দৈত্যে ফেলিলা প্রমাদে।।
দেবীর বাহন রণে হুহুঙ্কার ছাড়ে।
রণহস্তী কত ভয়ে পলায়ন করে।।
গগন উপরে কালী উঠিয়া তখন।
ধরা ’পরে করাঘাত করিল ভীষণ।।
দেবী-করাঘাতে তবে মহাশব্দ ওঠে।
দুর্ব্বল-হৃদয় সৈন্য মহীতলে লোটে।।
খল খল অট্টহাস্য উঠে ভয়ঙ্কর।
নাচিতেছে মাতৃগণ সমর ভিতর।।
সমর অঙ্গন নয় সে মহাশ্মশান।
শিবাদল মহোল্লাসে করে রক্তপান।।
মহাকোপে দৈত্যবর আসে তবে ধেয়ে।
কেঁপে ওঠে পৃথ্বীতল ভীষণ প্রলয়ে।।
এস দেবী মহারণে শক্তি যদি থাকে।
দুর্দ্দান্ত সমরে আজি বধিব তোমাকে।।
ছলনায় করিয়াছ ভ্রান্ত আমা সবে।
তোমারে বধিব আজি ভীষণ আহবে।।
‘তিষ্ঠ তিষ্ঠ’ রদবী তবে তাহারে কহিল।
অতঃপর ভীম রণে প্রবৃত্ত হইল।।
তারপর শক্তি অস্ত্র হানে খরতর।
সিংহনাদ করি ভীম অসুর-প্রবর।।
উল্কাশক্তি দিয়া দেবী রোধ করে তারে।
মহাদৈত্য নিক্ষেপিল পুনঃ অন্য শরে।।
কালিকা কাটিল শুম্ভ নিক্ষেপিত শর।
দেবী-শর কাটে শুম্ভ দৈত্য খরতর।।
কত নিক্ষেপিত বাণ দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয়।
অন্ধকার হল বিশ্ব বাণে বাণময়।।
সক্রোধে হানিল শূল দেবী দৈত্য ’পরে।
মূর্চ্ছিত হইয়া দৈত্য রণক্ষেত্রে পড়ে।।
পুনরায় সচেতন শুম্ভ সে উঠিয়া।
নিক্ষেপিল মহা অস্ত্র ক্রোধে উল্লম্ফিয়া।।
লক্ষ বাহু ধরি দৈত্য মহারণ করে।
চক্রায়ুধ আচ্ছাদিল প্রচণ্ড সমরে।।
দুর্গতিনাশিনী দুর্গা শায়ক হানিয়া।
শত্রু চক্র বাণ আদি ফেলিল কাটিয়া।
অতঃপর গদা লয়ে ক্রোধে দৈত্যবর।
হানিতে লাগিল গদা দেবীর উপর।।
খড়্গ হানি চূর্ণ করে দেবী গদা তার।
শূল দিয়া শুম্ভে বিদ্ধ করে চমৎকার।।
আঘাত পাইয়া পুনঃ দৈত্য সে ভষীণ।
সক্রোধে উঠিল ছাড়ি ভীম বজ্রস্বন।।
পুনর্ব্বার আরম্ভিল ঘোরতর রণ।
খড়্গ দিয়া দেবী হাসি করেন নিধন।।

-ইতি নিশুম্ভ বধ।



Print