আদেশ লভিয়া চণ্ড-মুণ্ড দৈত্যগণ।
চতুরঙ্গ লয়ে যুদ্ধে করিল গমন।।
দেখিল তাহারা যথা কেশরীবাহিনী।
বাজিছেন মূর্ত্তিমতী সংহাররূপিণী।।
পর্ব্বতের উচ্চশৃঙ্গে করেন বিহার।
সমগ্র পর্ব্বতে করি জ্যোতির বিস্তার।।
তাঁহারে হেরিয়া দৈত্য চলিল ধরিতে।
দেবীর সমীপে তারা যায় ত্বরান্বিতে।
ক্রোধে মসীবর্ণ হৈল দেবীর আনন।
ভ্রুকুটি-কুটিল মুখ ভীম দরশন।।
কপাল হইতে তাঁর বাহিরিল কালী।
নাদিল প্রলয় নাদ ভয়াল করালী।।
করপদ্মে পাশ অস্ত্র বিচিত্র খট্বাঙ্গ।
গলেতে নৃমুণ্ডমালা রক্তোপ্লুত অঙ্গ।।
পরিধানে দ্বীপিচর্ম্ম পরিশীর্ণা দেহ।
লক লক রসনায় অনল লেলিহ।।
কোটরে প্রবিষ্ট তার রক্তিম নয়ন।
অট্টহাস্যে হাসে দেবী ভয়াল ভীষণ।।
সবেগে ধাইল দেবী দৈত্যে বিনাশিতে।
হানিতে লাগিল দৈত্যে প্রবল হাসিতে।
অশ্ব, গজ, যোদ্ধাগণে ভুজে আকর্ষিয়া।
রসনায় লয়ে দেবী লইল গ্রাসিয়া।।
লইয়া সারথি রথ মত্ত গজপাত।
সহজে বদনে দেবী ফেলে শীঘ্রগতি।।
চর্ব্বণ করিল দেবী বিপুল দশনে।
মরিল অসংখ্য দৈত্য ভয়ঙ্কর রণে।।
শূলে নাশে কাহারেও নখরে কাহারে।
পদাঘাতে কাহারেও দেবী গিয়া মারে।।
সুবিশাল রণক্ষেত্রে তাণ্ডব নর্ত্তিয়া।
হনন করিছে দেবী প্রমত্তা হইয়া।।
খড়গাঘাতে বধে দেবী খট্বাঙ্গ প্রহারে।
ভেদিল কাহারও বক্ষ সুতীক্ষ্ণ নখরে।।
রণক্ষেত্রে উঠে তবে ভীম আর্ত্তনাদ।
ঘুচাইছে ক্ষেমঙ্করী সমরের সাধ।।
দেখি চণ্ড আক্রমণ কালিকায়।
অচ্ছন্ন করিল শরে দেবীর তথায়।।
মুণ্ডও বেড়িল তাঁরে চক্রের ঘূর্ণনে।
সে চক্র গ্রাসিল দেবী আপন বদনে।।
অট্টহাস্যে করে দেবী বদন ব্যাদান।
পর্ব্বতকন্দর সম বিবর মহান্।।
কেশেতে ধরিয়া চণ্ডে ছিন্ন করে শির।
চণ্ডের দুর্দ্দশা হেরি আসে মুণ্ড বীর।।
খড়েগর আঘাতে শির স্কন্ধচ্যুত হয়।
অট্টহাস্যে চরাচরে ভীতি উপজয়।।
চণ্ডমুণ্ড ছিন্ন শির লইয়া কালিকা।
চলিল বিরাজে দেবী যথায় চণ্ডিকা।।
পশ্বাধম চণ্ড-মুণ্ড, ছিন্ন মুণ্ড তার।
তব পাদপদ্মে দেবী দিনু উপহার।।
মহারণে শুম্ভ আর নিশুম্ভ নাশিয়া।
মহাকীর্ত্তি রাখ দেবী সমরেতে গিয়া।।
চণ্ডিকা কালীকে তবে বলেন বচন।
চণ্ড-মুণ্ড বধে তুমি চামুণ্ডা এখন।।
এ নামে স্বনামধন্যা এ মহী মণ্ডলে।
গাহিবে জগতবাসী জানি চিরকালে।।
-ইতি চণ্ড-মুণ্ড বধ। |