অসুরেন্দ্রে নিপতিত দেখি দেবগণ।
আরম্ভিল মহাহর্ষে দেবীর স্তবন।।
অয়ি দুর্গে কাত্যায়নী দুর্গতি নাশিনী।
হর জগতের দুঃখ, দুঃখ নিবারিণী।।
শরণ আগত জনে কৃপা করি মাতা।
দানিলে আশ্রয় ছায়া বিদিত সে কথা।।
সৃষ্টি রক্ষা কর তুমি সৃষ্টির ঈশ্বরী।
বিশ্বমাঝে মূলাধারা তুমি বিশ্বেশ্বরী।
জলরূপে জীবধাত্রী বিরাজ ধরায়।
পরামায়া রক্ষ তুমি স্বীয় মহিমায়।।
বিশ্ব প্রসূতিকা মাতা তুমি অদ্বিতীয়া।
তুমি হর-মনোরমা তুমি বিষ্ণুজায়া।।
কি কহি মহিমা তব অনন্ত অপার।
স্তবনীয়গণ মধ্যে তুমি মাগো সার।।
তুমি মক্ষ তাই তোমা ভজে মুনিগণ।
তুমি সিদ্ধি তাই পূজে যতেক রাজন্।।
তুমি সর্ব্বভূতরূপা অচিন্ত্যরূপিণী।
তুমি তৃপ্তি তুমি শান্তি মুক্তিপ্রদায়িনী।।
বাক্য গুণাতীত দেবী অপার মহিমা।
মনু আদি মুনিগণ দিতে পারে সীমা।।
নারায়ণী তুমি সর্ব্বভূতে বুদ্ধিরূপা।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের শকতি-সম্ভূতা।।
প্রলয়ে প্রলয়ঙ্করী সাক্ষাৎ সৃজনী।
চরাচর রক্ষাকর্ত্রী সন্তান-পালিনী।।
তুমি ধরাধর ধাত্রী তুমি সুমঙ্গলা।
তুমি স্নেহময়ী মাতঃ সন্তানবৎসলা।।
কালরূপা তুমি কালী নৃমুণ্ডমালিনী।
হংসরথে বিহর মা তুমি ত ব্রহ্মাণী।।
ময়ূরবাহনা দেবী তুমি মা কৌমারী।
বরাহরূপিণী দেবী বহু বিদ্যাধরী।।
শস্ত্রাবৃত তুমি দেবী হে চক্রধারিণী।
তুমি দেবী মহেশ্বরী প্রলয়কারিণী।।
হে বরেণ্যা পূজনীয়া বিশ্বশ্রেয়া তুমি।
ভক্তিযুত মনে দেবী তোমারে প্রণমি।।
বৃষভবাহিনী দেবী ঈশান-ঘরণী।
নারসিংহীরূপা মাগো তোমারে প্রণমি।।
হে অলঙ্ঘবীর্য্য মাতঃ হে অতুলনীয়া।
বজ্রকরে মহাদেবী পুরন্দর-প্রিয়া।।
অনন্ত স্ত্রীরূপা তুমি দেবী শিবদূতী।
নতশিরে ভক্তি মনে তোমায় প্রণতি।।
তুমি মহাবীর্য্যে মাতঃ দৈত্য-নিসূদনী।
বিষ্ণুলোকে তিষ্ঠ মাতঃ বৈষ্ণবীরূপিণী।।
মহারাত্রি মহাঘোরা চামুণ্ডে ভীষণা।
সকলই বিভূতি তব মানসমোহনা।।
তুমি মেধা সরস্বতী অবিদ্যা যে তুমি।
নিত্যরূপা হে তামসী তোমারে প্রণমি।।
তোমার প্রসাদে মাতা ভয় দূরীভূত।
অনিন্দ্য আনন্দরূপা করুণা আপ্লুত।।
ভক্তপ্রাণা মহামায়া তুমি বিশ্বাধার।
চরাচর পরিব্যাপ্ত আকৃতি তোমার।।
মূর্ত্তিমতী সুকৃতি মা পরমা প্রকৃতি।
সর্ব্বশ্রেষ্ঠা স্তবনীয়া জগৎ-প্রসূতি।।
ভদ্রকালী রক্ষা কর রক্ষ কাত্যায়নী।
শ্রদ্ধা পুষ্টি স্বধা স্বাহা বুদ্ধি স্বরূপিণী।।
তব মহাখড়গ মাতঃ যেন রক্ষা করে।
অজস্র সহস্রবিধ অকল্যাণ বারে।।
তুমি তুষ্টা তুমি রুষ্টা চিদানন্দময়ী।
অনলে অনিলে ব্যোমে বিরাজিতা অয়ি।।
তুমি আছ নিত্যকাল অয়ি নিত্যরূপা।
প্রণমি তোমায় মাতঃ জননী-স্বরূপা।।
শরণ্যে করহ কৃপা শরণার্থী জনে।
দেহ পদছায়া মাতঃ তাপিত সন্তানে।।
দারুণ সঙ্কটে কিংবা ভীম শত্রুভয়ে।
তরে যেন সর্ব্বজীব তব নাম লয়ে।।
সর্ব্বগুণান্বিতা দেবী সর্ব্বশাস্ত্রসার।
নন্দিত এ বিশ্বলোকে মহিমা তোমার।।
বিশ্বাত্মা অনিন্দরূপা বিশ্ববন্দা তুমি।
বরদাত্রী হে অভয়া তোমারে প্রণমি।।
প্রসন্না হও মা তুমি দেবী সুপ্রসন্না।
সর্ব্বগুণাশ্রয়ে দেবী মহতী অনন্যা।।
বিশ্বাত্তিহারিণী দেবী পাপ বিনাশিনী।
দেহ বর বরদাত্রী অচিন্ত্যরূপিণী।।
এত যদি সুরগণ স্তবসত্ততি কৈল।
প্রসন্না জননী ডাকি সবারে কহিল।।
তুষ্টা আমি তোমা স্তবে হে দেবতাগণ।
বর দান করি আমি কর তা গ্রহণ।।
সেই মত বর দিব আমি তোমা সবে।
যাতে সবাকার আজি উপকার হবে।।
জীবের কল্যাণ লাগি বর আমি দিব।
সর্ব্বজীবে বরাভয় আজি প্রদানিব।।
সর্ব্বদেশে সর্ব্বকালে শিষ্টের পালনে।
আবির্ভূত হব আমি দুষ্টের দমনে।।
নন্দ গোপ গৃহে আমি যশোদা-উদরে।
লভিল জনম এবে দেহরূপ ধরে।।
বিন্ধ্যগিরি সমাশ্রিত নাশিব অসুর।
রুদ্রারূপে পুনঃ শত্রু নাশিব প্রচুর।।
বৈপ্রচিত্ত উগ্রবীর্য্য অসুরনিকরে।
সংহারিব আমি নিজে প্রচণ্ড সমরে।।
অসুর ভক্ষিয়া মোর দশন নিচয়।
দাড়িম্ব পুষ্পের বর্ণ লভিবে নিশ্চয়।।
রক্তদন্তা নামে খ্যাত হব ভূমণ্ডলে।
সুরের নিকটে দেবী এত মত বলে।।
শতবর্ষ অনাবৃষ্টি ঘটিবে যখন।
অযোনিষম্ভূতা হব রক্ষার কারণ।।
মুনিগণে নিরখিব শত নেত্র পাতে।
শতাক্ষী লভিব নাম আমি অচিরেতে।।
স্বীয়দেহে সমদ্ভূত শাকাদি লইয়া।
পালন করিব বিশ্ব শাকম্ভরী হৈয়া।।
দুর্গানামে হব আমি দৈত্য-বিনাশিনী।
সবে কবে দুর্গতিনাশিনী।।
পুনরায় হিমালয়ে ভীমরূপ ধরি।
রক্ষঃকুল সংহারিব ভীমযুদ্ধ করি।।
যত মুনিগণ মোরে ভীমা নাম কবে।
রণাঙ্গিণী নাম মোর লভিব আহবে।।
অরুণ দৈত্যেরে আমি সংহার করিতে।
অসংখ্য ভ্রমর রূপে নাচিব রণেতে।।
হইবে ভ্রামরী নাম তবে সে আমার।
জগতের রিপুদল করিব সংহার।।
-ইতি দেবিস্তুতি। |