Increase Reset Decrease

অথ কীলকস্তবঃ‌

অথ কীলকস্তবঃ।
অস্য শ্রীকীলকস্তবমন্ত্রস্য শিবর্ঋষিঃ-অনুষ্টুপ্‌ছন্দঃ শ্রীমহাসরস্বতীদেবতা
শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গজপে বিনিয়োগঃ।

এই কীলকস্তবের ঋষি-মহাদেব, ছন্দঃ-অনুষ্টুপ্‌ ও  দেবতা-মহাসরস্বতী।
শ্রী জগদম্বার প্রীতির নিমিত্ত চণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে কীলকস্তব-পাঠের প্রয়োগ হয়।

ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ।

মূল

অনুবাদ

ওঁ মার্কণ্ডেয় উবাচ।
ওঁ বিশুদ্ধজ্ঞানদেহায় ত্রিবেদী-দিব্যচক্ষুষে।
শ্রেয়ঃ প্রাপ্তি-নিমিত্তায় নমঃ সোমার্দ্ধধারিণে।। ১

ঋষি মার্কণ্ডেয় স্বীয় শিষ্যগণকে নিম্নোক্ত কীলকস্তব বলিলেন-
নির্মল জ্ঞান যাঁহার দেহ, বেদত্রয় যাঁহার তিনটি দিব্য চক্ষু, যিনি মোক্ষপ্রাপ্তির কারণ এবং যাঁহার কপালে অর্ধচন্দ্র শোভিত, সেই মহাদেব শিবকে নমস্কার করি। ১

সর্ব্বমেতদ্‌ বিজানীয়ান্মন্ত্রাণামপি কীলকম্‌।
সোহপি ক্ষেমমবাপ্নোতি সততং জপ্যতৎপরঃ।। ২

এই কীলকস্তব সকল মন্ত্রসিদ্ধির বিঘ্ননাশক বরিয়া জানিবে। যিনি সতত এই কীলকস্তব পাঠ করেন তিনিও কল্যাণলাভ করেন। ২

সিধ্যন্ত্যুচ্চাটনাদীনি কর্ম্মাণি সকলান্যপি।
এতেন স্তুবতাং দেবীং স্তোত্রবৃন্দেন ভক্তিতঃ*।। ৩
*“স্তোত্রমাত্রেন সিধ্যতি” ইত্যপি পাঠঃ।

এই চণ্ডী-স্তোত্র দ্বারা ভক্তিপূর্বক দেবীর স্তব করিলে উচ্চাটনাদি অভিচার-কর্মসমূহ সিদ্ধ হয়। ৩

ন মন্ত্রো নৌষধং তস্য ন কিঞ্চিদপি বিদ্যতে।
বিনা জপ্যেন সিধ্যেত সর্ব্বমুচ্চাটনাদিকম্‌।। ৪

সেই ব্যক্তির সিদ্ধিলাভে মন্ত্র, ঔষধ বা অন্য কিছুও আবশ্যক নাই। মন্ত্রজপ ব্যতীত কেবল এই স্তোত্র-পাঠে তাঁহার সকল উচ্চাটনাদি সিদ্ধ হয়। ৪

সমগ্রাণ্যপি সেৎস্যন্তি লোকে শঙ্কামিমাং হরঃ।
কৃত্বা নিমন্ত্রয়ামাস সর্ব্বমেবমিদং শুভম্‌।। ৫

অল্পায়াসসাধ্য চণ্ডীপাঠেই সকল অভিলাষ সিদ্ধ হয় কিনা-লোকপ্রসিদ্ধ এই সন্দেহ অবগত হইয়া মহাদেব সকলকে আহ্বানপূর্বক বলিলেন যে, এই স্তোত্রই (সপ্তশতীই) পরম কল্যাণপ্রদ। ৫

স্তোত্রং বৈ চণ্ডিকায়াস্তু তচ্চ গুহ্যং চকার সঃ।
স প্রাপ্নোতি* সুপুণ্যেন তাং যথাবন্নিমন্ত্রিণাম্‌।। ৬
*“সমাপ্নোতি” ইতি চ পাঠঃ।

তাহার পর তিনি চণ্ডিকার এই স্তবটি গুপ্ত করিয়া রাখিলেন। যথাবিধি সাধনশীল ব্যক্তির ন্যায় পাঠক এই স্তোত্র (সপ্তশতী)-পাঠলব্ধ সুপুণ্যের দ্বারা দেবীকে প্রাপ্ত হন। ৬

সোহপি ক্ষেমমবাপ্নোতি সর্ব্বমেব ন সংশয়।
কৃষ্ণায়াং বা চতুর্দ্দশ্যামষ্টম্যাং বা সমাহিতঃ।।৭

অতএব, তিনি সকল কল্যাণ লাভ করেন, ইহাতে সংশয় নাই। যিনি কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী বা চতুর্দশীতে অনন্যচিত্ত হইয়া বিধিপূর্বক ইহা পাঠ বা শ্রবণ করেন, তাঁহার প্রতি দেবী প্রসন্না হন, অন্য প্রকারে নহে। এইরূপ কীলকের দ্বারাই মহাদেব চণ্ডীকে কীলিত (বেষ্টিত) করিয়াছেন। ৭-৮

দদাতি প্রতিগৃহ্ণাতি নান্যথৈষা প্রসীদতি।
ইত্থং রূপেণ কীলেন মহাদেবেন কীলিতম্‌।। ৮

যো নিষ্কীলাং বিধায়ৈনাং চণ্ডীং জপতি নিত্যশঃ।
স সিদ্ধঃ স গণঃ সোহথ গন্ধর্ব্বো জায়তে ধ্রুবম্‌।। ৯

যে ব্যক্তি কীলকস্তব পাঠ পূর্বক চণ্ডীকে কীলক-শূন্য করিয়া প্রত্যহ শুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে চণ্ডীপাঠ করেন, তিনি পরজন্মে নিশ্চয়ই দেবীর গণ, সিদ্ধ বা গন্ধর্ব হইয়া জন্মগ্রহণ করেন। ৯

ন চৈবাপাটবং তস্য ভয়ং ক্বাপি ন জায়তে।
নাপমৃত্যুবশং যাতি মৃতে চ মোক্ষমাপ্‌নুয়াৎ।। ১০

তাঁহার কোন কার্যে অপটুতা থাকে না, এবং তাঁহার কোথাও ভয় জন্মে না। তিনি অপমৃত্যুর অধীন হন না এবং মৃত্যুর পরে মোক্ষলাভ করেন। ১০

জ্ঞাত্বা প্রারভ্য কুর্ব্বীত হ্যকুর্ব্বাণো বিনশ্যতি।
ততো জ্ঞাত্বৈব সম্পূর্ণমিদং প্রারভ্যতে বুধৈঃ।। ১১

অর্থবোধসহকারে এই কীলকস্তব-পাঠান্তে চণ্ডীপাঠ করিতে হয়। এইরূপ যিনি না করেন, তাঁহার চণ্ডীপাঠের ফল নষ্ট হয়। ইহা সম্পূর্ণরূপে জানিয়াই পণ্ডিতগণ কীলক-স্তব-পাঠান্তে অর্থবোধপূর্বক চণ্ডীপাঠ করেন। ১১

সৌভাগ্যাদি চ যৎকিঞ্চিদ্দৃশ্যতে ললনাজনে।
তৎ সর্ব্বং তৎপ্রসাদেন তেন জপ্যমিদং সদা।। ১২

ললনাদিগের (নারীগণের) যে সৌভাগ্যাদি দৃষ্ট হয় সেই সকলই এই চণ্ডীপাঠের ফলে লাভ হয়। সুতরাং এই শুভ স্তোত্র (চণ্ডী) নিত্য পাঠ করা উচিত। ১২

শনৈস্তু জপ্যমানেহস্মিন্‌ স্তোত্রে সম্পত্তিরুচ্চকৈঃ।
ভবত্যেব সমগ্রাপি ততঃ প্রারভ্যমেব তৎ।। ১৩

ধীরে ধীরে চণ্ডীপাঠ করিলে সামান্য ফল লাভ হয় এবং উচ্চৈঃস্বরে চণ্ডীপাঠ করিলে বিপুল সিদ্ধি লাভ হয়, অতএব উচ্চৈঃস্বরে চণ্ডীপাঠ কর্তব্য। ১৩

ঐশ্বর্য্যং তৎপ্রসাদেন সৌভাগ্যারোগ্যমেব চ।
শত্রুহানিঃ পরো মোক্ষঃ সতূয়তে সা ন কিং জনৈঃ।। ১৪

যদি চণ্ডীর প্রসাদে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, শত্রুনাশ এবং পরম মোক্ষলাভ হয়, তবে লোকে কেন চণ্ডীপাঠ করেন না? ১৪

চণ্ডিকাং হৃদয়েনাপি যঃ স্মরেৎ সততং নরঃ।
হৃদ্যং কামমবাপ্নোতি হৃদি দেবী সদা বসেৎ।। ১৫

যে ব্যক্তি হৃদয়ে সতত চণ্ডীকার স্মরণ করেন, তাঁহার হৃদয়ের সকল কামনা পূর্ণ হয় এবং তাঁহার হৃদয়ে দেবী সদা বিরাজ করেন। ১৫

অগ্রতোহমুং মহাদেব-কৃতং কীলকবারণম্‌।
নিষ্কীলঞ্চ তথা কৃত্বা পঠিতব্যং সমাহিতৈঃ।।১৬

প্রথমে মহাদেবকৃত সিদ্ধিবিঘ্ননাশক এই কীলকস্তব পাঠ দ্বারা চণ্ডী নিষ্কীলক করিয়া পরে সমাহিত চিত্তে অর্থবোধ সহকারে চণ্ডীপাঠ করিতে হয়। ১৬
গুপ্তবতী ও দুর্গাপ্রদীপ টীকাদ্বয় অনুসারে কীলকস্তবের অনুবাদ সমাপ্ত।



Print