Increase Reset Decrease

সপ্তশতীরহস্যত্রয়

সপ্তশতীরহস্যত্রয়
শ্রী সপ্তশতীর এই রহস্যত্রয়ের ঋষিগণ যথাক্রমে-ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্র;
দেবতাগণ যথাক্রমে-মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও gnvmi¯^Zx; ছন্দ-অনুষ্টুপ্‌,; বীজ-নবদুর্গা, মহালক্ষ্মী;ড়
এবং শক্তি-শ্রীং। অভীষ্টফলসিদ্ধির জন্য সপ্তশতীপাঠান্তে রহস্যত্রয়পাঠের প্রয়োগ হয়।

 

(১)
প্রাধানিক রহস্য

[ সপ্তশতী রহস্যত্রয়ের ভাস্কররায়কৃত গুপ্তবতী-নাম্নী একটিমাত্র টীকা আছে। তদনুযায়ী উহাদের অনুবাদ প্রদত্ত হইল। ]

মূল

অনুবাদ

রাজোবাচ
ভগবন্নবতারা মে চণ্ডিকায়া স্ত্বয়োদিতাঃ।
এতেষাং প্রকৃতিং ব্রহ্মন্‌ প্রধানং বক্তুমর্হসি।। ১

রাজা সুরথ মেধা ঋষিকে জিজ্ঞাসা করিলেন-হে ভগবন্‌, চণ্ডিকা দেবীর অবতারসমূহের কথা আমাকে আপনি বলিয়াছেন। হে বিপ্র, ইহাদের প্রধান প্রকৃতির (প্রাধানিক রহস্যের) কথা এখন আমাদের বলুন। ১

আরাধ্যং যন্ময়া দেব্যাঃ ¯^iƒcs যেন বৈ দ্বিজ।
বিধিনা ব্রূহি সকলং যথাবৎ প্রণতস্য মে।। ২

হে দ্বিজ, দেবীর যে ¯^iƒc যে বিধির দ্বারা আমার আরাধনা করা কর্তব্য, সেই সকল যথাযথভাবে আমাকে বলুন। আপনাকে প্রণাম করি। ২

ঋষিরুবাচ
ইদং রহস্যং পরমমনাখ্যেয়ং প্রচক্ষ্যতে।
ভক্তোহসীতি ন মে কিঞ্চিৎ তবাবাচ্যং নরাধিপ।। ৩

মেধা ঋষি বলিলেন-হে নরাধিপ, এই পরম রহস্যকে অনাখ্যেয় (অতন্ত গোপনীয়) বলা হয়। কিন্তু তুমি দেবী ভক্ত, তোমাকে আমার অবাচ্য (অকথনীয়) কিছুই নাই। ৩

সর্বস্যাদ্যা মহালক্ষ্মী স্ত্রিগুণা পরমেশ্বরী।
j¶¨vj¶¨¯^iƒcv সা ব্যাপ্য কৃৎস্নং ব্যবস্থিতা।। ৪

পরমেশ্বরী মহালক্ষ্মী ত্রিগুণময়ী (তামসী, রাজসী ও সাত্ত্বিকী) ও সকলের আদ্যা প্রকৃতি। তিনি লক্ষ্যা (সগুণা) ও অলক্ষ্যা (নির্গুণা) এবং জগৎপ্রপঞ্চ ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। ৪

মাতুলিঙ্গং* গদাং খেটং পানপাত্রঞ্চ বিভ্রতী।
নাগং লিঙ্গঞ্চ যোনিঞ্চ বিভ্রতী নৃপ মূর্ধ্বনি।। ৫
*মাতুলুঙ্গম্‌ ইতি বা পাঠঃ।

হে নৃপ, ইনি হস্তে লেবু (বা শ্রীফল), গদা, খেট (চর্ম) ও পানপাত্র ধারণ করেন এবং মস্তকে নাগ (ব্রহ্মার চিহ্ন) লিঙ্গ (শিবের পুংচিহ্ন) ও যোনি (বিষ্ণুর স্ত্রীচিহ্ন) ধারণ করেন। ৫

তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভা তপ্তকাঞ্চনভূষণা।
শূন্যং তদখিলং স্মেন পূরয়ামাস তেজসা।। ৬

ইনি তপ্তকাঞ্চনবর্ণযুক্তা (রক্তবর্ণা) এবং Z߯^Y©gq অলঙ্কারভূষিতা এবং প্রলয়কালে ¯^xq তেজে সমগ্র শূন্য (মহাকাশ) পূর্ণ করিয়াছিলেন। ৬

শূন্যং তদখিলং লোকং বিলোক্য পরমেশ্বরী।
বভার রূপমপরং তমসা কেবলন হি।। ৭

পরমেশ্বরী (মহালক্ষ্মী) প্রলয়কালে সমগ্র বিশ্ব শূন্য দেখিয়া কেবল তমোগুণ দ্বারা অপর এক নারীরূপ ধারণ করিলেন। ৭
(মহালক্ষী মহাকালীরূপে পরিণতা হইলেন)।

সা ভিন্নাঞ্জনসঙ্কাশা দংষ্ট্রাঞ্চিতবরাননা।
বিশাললোচনা নারী বভূব তনুমধ্যমা।। ৮

(মূলা দেবী মহালক্ষ্মী হইতে) অভিন্না সেই নারী (মহাকালী) অঞ্জনতুল্য গাঢ় নীলবর্ণা দশন-পীড়িতাননা বিশালনয়না এবং মধ্যমাবয়বা হইলেন। ৮

খড়্‌গ-পাত্র-শিরঃ-খেটৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা।
কবন্ধহারমূরসা বিভ্রাণা শিরসা স্রজম্‌।। ৯

তাঁহার চারি হস্ত খড়্‌গ, পানপাত্র, শিরঃ ও খেট দ্বারা অলঙ্কৃত। তিনি বক্ষদেশে কবন্ধের (শিরোহীন দেহে) মালা ও মস্তকে মুণ্ডমালা ধারণ করেন। ৯

তাং প্রোবাচ মহালক্ষ্মীস্তামসীং প্রমদোত্তমাম্‌।
দদামি তব নামানি যানি কর্মাণি তানি তে।। ১০

সুন্দরীশ্রেষ্ঠা সেই তামসী মহাকালী দেবীকে মহালক্ষ্মী বলিলেন- তোমার যে যে কর্ম আছে তৎ তৎ অনুযায়ী তোমার বিভিন্ন নাম দিতেছি। ১০

মহামায়া মহাকালী মহামারী ক্ষুধা তৃষা।
নিদ্রা তৃষ্ণা চৈকবীরা কালরাত্রির্দুরত্যয়া।। ১১

তুমি (ব্রহ্মাদিরও মোহক বলিয়া) মহামায়া, মহাকালী, মহামারী (মহামৃত্যুরূপা), ক্ষুধা (সর্ব অবিদ্যাদি ভক্ষণেচ্ছাবতী), তৃষা (সর্ব অবিদ্যা পানেচ্ছাবতী), নিদ্রা (যোগনিদ্রা ও সমাধিরূপা), তৃষ্ণা (ভক্তকৃত ভক্তীচ্ছাবতী) একবীরা (প্রপঞ্চমধ্যে অদ্বিতীয়া ও অলঙ্ঘ্যবীর্যা), (কালনাশক বলিয়া) কালরাত্রি এবং দুরত্যয়া (বিনাশরহিতা)। তোমার এই নামদশক কর্মানুসারে প্রতিপাদ্য (প্রসিদ্ধ)। নামানুসারে তোমার এই সকল কর্ম জানিয়া যে চণ্ডীপাঠ করে সে সুখলাভ করে। ১১-১২

ইমানি তব নামানি প্রতিপাদ্যানি কর্মভিঃ।
এভিঃ কর্মাণি তে জ্ঞাত্বা যোহধীতে সোহশ্নুতে সুখম্‌।। ১২

তামিত্যুক্ত্বা মহালক্ষ্মীঃ ¯^iƒcgcis নৃপ।
সত্ত্বাখ্যেনাভিশুদ্ধেন গুণেনেন্দুপ্রভং দধৌ।। ১৩

হে নৃপ, তাহাকে (সেই মহাকালীকে) এইরূপ বলিয়া মহালক্ষ্মী অতি শুদ্ধা সত্ত্বগুণময়ী চন্দ্রপ্রভা অন্য এক মূর্তি ধারণ করিলেন। (মহালক্ষ্মী gnvmi¯^Zxiƒ‡c পরিণতা হইলেন।) ১৩

অক্ষমালাঙ্কুশধরা বীণাপুস্তকধারিণী।
সা বভুব বরা নারী নামান্যস্যৈব সা দদৌ।। ১৪

সেই শ্রেষ্ঠা নারী (gnvmi¯^Zx) অক্ষমালা ও অঙ্কুশধরা এবং বীণা ও পুস্তক-ধারিণী। মহালক্ষ্মী তাঁহাকে মহাবিদ্যা, মহাবাণী, ভারতী, বাক্‌, mi¯^Zx, আর্যা, ব্রাহ্মী, কামধেনু, বেদগর্ভা ও ধীশ্বরী (বা সুরেশ্বরী)-এই সকল নাম প্রদান করিলেন। ১৪-১৫

মহাবিদ্যা সহাবাণী ভারতী বাক্‌ mi¯^Zx|
আর্য্যা ব্রাহ্মী ওকামধেনুর্বেদগর্ভা চ ধীশ্বরী*।। ১৫
*সুরেশ্বরী ইতি বা পাঠঃ।

অথোবাচ মহালক্ষ্মীর্মহাকালীং mi¯^Zxg&|
যুবাং জনয়তাং দের্বৌ মিথুনে ¯^vbyiƒcZt|| ১৬

অনন্তর মহালক্ষ্মী মহাকালী ও miস্বZx‡K বলিলেন- তোমরা উভয়ে স্ব ¯^ অনুরূপ এক দেব (পুরুষ) ও এক দেবী (নারী) সৃষ্টি কর। ১৬

ইত্যুক্ত্বা তে মহালক্ষ্মীঃ সসর্জ মিথুনং ¯^qg&|
হিরণ্যগর্ভৌ রুচিরৌ স্ত্রীপুংসৌ কমলাসনৌ।। ১৭

তাঁহাদিগকে এইরূপ বলিয়া মহালক্ষ্মী ¯^qs ¯^Y©eY© (বা বিশুদ্ধজ্ঞানদেহ), সুন্দর ও কমলাসনস্থিত একটি পুরুষ এবং তদনুরূপ একটি নারী সৃজন করিলেন। ১৭

ব্রহ্মন্‌ বিধে বিরঞ্চেতি ধাতরিত্যাহ তং নবম্‌।
শ্রীঃ পদ্মে কমলে লক্ষীত্যাহ মাতা স্ত্রিয়ঞ্চ তাম্‌। ১৮

মহালক্ষ্মী সেই পুরুষকে ব্রহ্মা, বিধি, বিরিঞ্চি ও ধাতা বলিয়া m‡¤^vab করিলেন এবং সেই নারীকে শ্রী, পদ্মা, কমলা, লক্ষ্মী ও মাতা-এই সকল নামে অভিহিতা করিলেন। ১৮

মহাকালী ভারতী চ মিথুনে সৃজতঃ সহ।
এতয়োরপি রূপাণি নামানি চ বদামি তে।। ১৯

মহাকালী ও ভারতী (gnvmi¯^Zx) যে পুরুষ ও নারী যুগল সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তাঁহাদের নাম ও ¯^iƒc তোমাদের বলিতেছি। ১৯

নীলকণ্ঠং রক্তবাহুং শ্বেতাঙ্গং চন্দ্রশেখরম্‌।
জনয়ামাস পুরুষং মহাকালী সিতাং স্ত্রীয়ম্‌।। ২০

মহাকালী শ্বেতবর্ণা নারী এবং নীলকণ্ঠ, রক্তবাহু, শ্বেতাঙ্গ ও ললাটে চন্দ্রবিশিষ্ট পুরুষ সৃষ্টি করিলেন। ২০

স রুদ্রঃ শঙ্করঃ স্থাণুঃ কপর্দী চ ত্রিলোচনঃ।
ত্রয়ী বিদ্যা কামধেনুঃ সা স্ত্রীভাবা* ¯^ivn¶iv|| ২১
*স্ত্রীভাষা ইতি বা পাঠঃ।

সেই (সৃষ্ট) পুরুষ রুদ্র, শঙ্কর, স্থাণু, কপর্দী ও ত্রিলোচন এবং সেই (সৃষ্টা) স্ত্রী (বেদ) ত্রয়ী, বিদ্যা, কামধেনু, স্ত্রীভাবা (বালভাবা), অক্ষরা (নিত্যা, স্ফোটরূপা বা ব্যঞ্জনরূপা) এবং ¯^iv (ষোড়শরূপা) ২১

mi¯^Zx স্ত্রিয়ং গৌরীং কৃষ্ণষ্ণ পুরুষং নৃপ।
জনয়ামাস নামানি তয়োরপি বদামি তে।। ২২

হে নৃপ mi¯^Zx এক গৌরবর্ণা স্ত্রী এবং এক কৃষ্ণবর্ণ পুরুষ সৃষ্টি করিলেন। ইঁহাদের নামও তোমাকে বলিতেছি। ২২

বিষ্ণুঃ কৃষ্ণো হৃষীকেশো বাসুদেবো জনার্দনঃ।
উমা গৌরী সতী চণ্ডী সুন্দরী সুভগা শিবা**।। ২৩
**শুভা ইতি বা পাঠঃ।

পুরুষের নাম বিষ্ণু, কৃষ্ণ, হৃষিকেশ, বাসুদেব ও জনার্দন এবং নারীর নাম উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী সুন্দরী, সুভগা (ভগযুক্তা) ও শিবা। ২৩

এবং যুবতয়ঃ সদ্যঃ পুরুষত্বং প্রপেদিরে।
চক্ষুষ্মন্তো নু পশ্যন্তি নেতরেহতদবিদোজনাঃ।। ২৪

পরে যুবতীগণ সদ্য পুরুষত্ব প্রাপ্ত হইলেন। চক্ষুষ্মান্‌ (জ্ঞানি)-গণ এই তত্ত্ব দর্শন করেন (অবগত হন), অপরে (অজ্ঞানীরা) নহে। কারণ, উক্ত তত্ত্ব জ্ঞানচক্ষুর দৃশ্য, চর্ম-চক্ষুর অদৃশ্য। ২৪

ব্রহ্মণে প্রদদৌ পত্নীং মহালক্ষ্মীর্নৃপ ত্রয়ীম্‌।
রুদ্রায় গৌরীং বরদাং বাসুদেবায় চ শ্রিয়ম্‌।। ২৫

হে নৃপ, মহালক্ষ্মী ব্রহ্মাকে ত্রয়ী (mi¯^Zx), রুদ্রকে বরদাত্রী গৌরী এবং বিষ্ণুকে শ্রী-পত্নীরূপে প্রদান করিলেন। ২৫
(এই মিথুনত্রয় কারণদেহ-সূক্ষ্মদেহ-স্থূলদেহ-অভিমানী।)

¯^iqv সহ সম্ভূয় বিরঞ্চোহগুমজীজনৎ।
বিভেদ ভগবান্‌ রুদ্রস্তদ্‌ গৌর্যা সহ বীর্যবান্‌।। ২৬

বিরিঞ্চি (ব্রহ্মা) ¯^ivi (বা mi¯^Zxi) সহিত মিলিত হইয়া এক অণ্ড সৃষ্টি করিলেন। বীর্যবান্‌ ভগবান্‌ রুদ্র গৌরীর সহিত সেই অণ্ডকে বিভক্ত করিলেন। ২৬

অণ্ডমধ্যে প্রধানাদি-কার্যজাতমভূন্‌নৃপ।
মহাভূতাত্মকং সর্ব্বং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্‌।। ২৭

হে নৃপ, সেই অণ্ডমধ্যে মহাভূতাত্মক স্থাবর জঙ্গম সমগ্র জগৎ মহদহঙ্কারাদি (প্রকৃতির) কার্য দ্বারা জাত হইল। ২৭

পুপোষ পালয়ামাস তল­ক্ষ্ম্যা সহ কেশবঃ।
সংজহার জগৎ সর্ব্বং সহ গৌর্যা মহেশ্বরঃ।। ২৮

কেশব লক্ষ্মীর সহিত সেইসকল পোষণ ও পালন করিলেন এবং গৌরীর সহিত মহেশ্বর প্রলয়কালে সমগ্র জগৎ সংহার করিলেন। ২৮

মহালক্ষ্মীর্মহারাজ সর্ব্বসত্ত্বময়ীশ্বরী।
নিরাকারা চ সাকারা সৈব নানাভিধানভৃৎ।।
নামান্তরৈর্নিরূপ্যৈষা নাম্না নান্যেন কেনচিৎ।। ২৯

হে মহারাজ, সর্বসত্ত্বময়ী, ঈশ্বরী মহালক্ষ্মী নিরাকারা নির্গুণা হইয়াও সাকারা (সগুণা)। সাকার অবস্থায় তিনি বিবিধ নাম ও রূপ ধারণ করেন। নির্গুণরূপে তিনি সত্য, জ্ঞান ও আনন্দ-এই ¯^iƒcj¶‡Yi দ্বারা নিরূপ্যা (লক্ষণীয়া); কিন্তু প্রত্যক্ষাদি অন্য কোন প্রমাণ দ্বারা বোধ্য নহেন। ২৯

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণে প্রাধানিক-রহস্যং সমাপ্তম্‌।

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্গত প্রাধানিক রহস্যের অনুবাদ সমাপ্ত।


(২)
বৈকৃতিক রহস্য

মূল

অনুবাদ

ঋষিরুবাচ
ত্রিগুণা তামসী দেবী সাত্ত্বিকী যা ত্রিধোদিতা*।
সা শর্বা চণ্ডিকা দুর্গা ভদ্রা ভগবতীর্যতে।। ১
*ত্বয়োদিতা ইতি বা পাঠঃ।

মেধা ঋষি বলিলেন-যে ত্রিগুণময়ী দেবীর তামসী, রাজসী ও সাত্ত্বিকী এই ত্রিবিধা মূর্তির কথা বলা হইল, তিনি শর্বা, চণ্ডিকা, দুর্গা, ভদ্রা ও ভগবতী বলিয়া উক্তা হন। ১

যোগনিদ্রা হরেরুক্তা মহাকালী তমোগুণা।
মধুকৈটভনাশার্থং যাং তুষ্টাবাম্‌বুজাসনঃ।। ২

পদ্মাসনা ব্রহ্মা মধুকৈটভনাশার্থ যে দেবীকে স্তব করিয়াছিলেন, তিনিই বিষ্ণুর যোগনিদ্রারূপা তামসী মহাকালী বলিয়া কথিতা। ২

দশবক্ত্রা দশভুজা দশপাদাঞ্জনপ্রভা।
বিশালয়া রাজমানা ত্রিংশলে­াচনমালয়া।। ৩

তাঁহার দশ মুখ, দশ হস্ত ও দশ পাদ। তিনি অঞ্জনপ্রভা ও বিশাল ত্রিশটি নয়নমালার সহিত বিরাজমানা। ৩

স্ফুরদ্দশনদংষ্ট্রা সা ভীমরূপাপি ভূমিপ।
রূপসৌভাগ্যকান্তীনাং সা প্রতিষ্ঠা মহাশ্রিয়াম্‌।। ৪

হে রাজন্‌, সুন্দর ও উজ্জ্বলদন্তযুক্তা এবং ভীমরূপা হইলেও তিনি ভক্তগণের রূপ, সৌভাগ্য ও কান্তি প্রভৃতি মহা-শ্রীর আশ্রয়। ৪

খড়্‌গ-বাণ-গদা-শূল-শঙ্খ-চক্র-ভুশুণ্ডিভৃৎ।
পরিঘং কার্মুকং শীর্ষং নিশ্চ্যোতদ্রুধিরং দধৌ।। ৫

(দক্ষিণাধঃকর হইতে বামাধঃকর পর্যন্ত) তিনি খড়্‌গ, বাণ, শূল, চক্র ও ভুশুণ্ডি ধারণ করেন এবং পরিঘ, কার্মুক (ধনু) ও রুধির-ক্ষরণ-শীল শীর্ষ (মস্তক) ধারণ করেন। ৫

এষা সা বৈষ্ণবী মায়া মহাকালী দুরত্যয়া।
আরাধিতা বশীকুর্যাৎ পূজাকর্ত্তূশ্চরাচরম।। ৬

এই দুরত্যয়া (অনতিক্রমণীয়া) বিষ্ণুমায়া মহাকালী আরাধিতা হইলে পূজাকর্তার (পূজকের) চরাচর জগৎ বশীভূত করেন। ৬

সর্ব্বদেবশরীরেভ্যো যাবির্ভূতামিতপ্রভা।
ত্রিগুণা সা মহালক্ষ্মীঃ সাক্ষান্মহিষমর্দিনী।। ৭

সকল দেবতার শরীর হইতে যে অমিতপ্রভা দেবী আবির্ভূতা হইয়াছিলেন, তিনিই ত্রিগুণময়ী মহিষমর্দিনী সাক্ষাৎ মহালক্ষ্মী। ৭ (চণ্ডী, ২/১০-১৩ দ্রষ্টব্য)

শ্বেতাননা নীলভুজা সুশ্বেতস্তনমণ্ডলা।
রক্তমধ্যা রক্তপাদা নীলজঙ্ঘোরুরুন্মদা।। ৮

তিনি শ্বেতাননা ও নীলহস্তা। তাঁহার স্তনমণ্ডল অতি শ্বেতবর্ণা ও শরীরের মধ্যভাগ রক্তবর্ণা। তিনি রক্তচরণা। তাঁহার জঙ্ঘা ও উরু নীলবর্ণা ও তিনি ব্রহ্মানন্দে উন্মাদিনী। ৮

সূচীত্রজঘনা চিত্রমাল্যাম্‌বরবিভূষণা।
চিত্রানুলেপনা কান্তি-রূপ-সৌভাগ্যশালিনী।। ৯

তিনি সূচিত্রজঘনা, বিচিত্রমাল্য ও বস্ত্রবিভূষিতা, বিবিধ-অনুলেপন (গন্ধ)-যুক্তা এবং কান্তি, রূপ ও সৌভাগ্য-মণ্ডিতা। ৯

অষ্টাদশভুজা পূজ্যা সা সহস্রভুজা সতী।
আয়ুধান্যত্র বক্ষন্তে দক্ষিণাধঃকরক্রমাৎ।। ১০

তিনি সহস্রভুজা হইলেও অষ্টাদশভুজারূপে পূজ্যা। দক্ষিণ দিকের নিম্নহস্তক্রমে তাঁহার (হস্তস্থিত) আয়ুধ (অস্ত্র)-সমূহ এখানে বলা হইতেছে। ১০

অক্ষমালা চ কমলং বাণোহসিঃ কুলিশং গদা।
চক্রং ত্রিশূলং পরশুঃ শঙ্খো ঘন্টা চ পাশকঃ।
শক্তির্দণ্ডশ্চর্ম চাপং পানপাত্রং কমণ্ডলুঃ।। ১১

কমলাসনা দেবীর অষ্টাদশ হস্ত রুদ্রাক্ষমালা, পদ্ম, বাণ, অসি, বজ্র, গদা, চক্র, ত্রিশূল, পরশু, শঙ্খ, ঘন্টা ও পাশ, শক্তি, দণ্ড, চর্ম (ঢাল), চাপ (ধনু), পানপাত্র ও কমণ্ডলু-এই অষ্টাদশ অস্ত্রে অলঙ্কৃত। ১১-১২

অলঙ্কৃতভুজামেভিরায়ুধৈঃ কমলাসনাম্‌।
সর্ব্বদেবময়ীমীশাং মহালক্ষ্মীমিমাং নৃপ।
পূজয়েৎ সর্ব্বলোকানাং স দেবানাং প্রভুর্ভবেৎ।। ১২

গৌরীদেহাৎ সমুদ্‌ভূতা যা সত্ত্বৈকগুণাশ্রয়া।
সাক্ষাৎ mi¯^Zx প্রোক্তা শুম্ভাসুর-নিবর্হিণী।। ১৩

হে নৃপ, সর্বদেবময়ী ঈশ্বরী এই মহালক্ষ্মীকে যিনি পূজা করেন তিনি সকল লোকের ও দেবগণের প্রভু হন। ১৩

দধৌ চাষ্টভুজা বাণমুসলে শূলচক্রভৃৎ।
শঙ্খং ঘন্টাং লাঙ্গলঞ্জ কার্মূকং বসুধাধিপ।। ১৪

যে সত্ত্বগুণময়ী দেবী গৌরীদেহ হইতে সমুদ্ভূতা হইয়াছিলেন, তিনিই শুম্ভাসুরনাশিনী সাক্ষাৎ mi¯^Zx বলিয়া উক্তা। ১৪

এষা সম্পূজিতা ভক্ত্যা সর্ব্বজ্ঞত্বং প্রযচ্ছতি।
নিশুম্ভমথিনী দেবী শুম্ভাসুরনিবর্হিণী।। ১৫

হে পৃথিবীপতি, এই অষ্টভুজা gnvmi¯^Zx দেবী অষ্ট হস্তে বাণ, মুষল, শূল, চক্র, শঙ্খ ঘন্টা, লাঙ্গল ও ধনু ধারণ করেন। ১৫

ইত্যুক্তানি ¯^iƒcvwY মূর্তীনাং তব পার্থিব।
উপাসনং জগন্মাতুঃ পৃথগাসাং নিশাময়।। ১৬

এই নিশুম্ভমর্দিনী শুম্ভাসুরনাশিনী দেবী ভক্তিপূর্বক সম্পূজিতা হইলে সর্বজ্ঞত্ব প্রদান করেন। ১৬

মহালক্ষ্মীর্যদা পূজ্যা মহাকালী mi¯^Zx|
দক্ষিণোত্তরয়োঃ পূজ্যে পৃষ্ঠতো মিথুনত্রয়ম্‌।। ১৭

হে নৃপ, তোমার নিকট জগন্মাতার মূর্তিসমূহের ¯^iƒc এইরূপে উক্ত হইল। এখন পৃথকভাবে ইহাদের উপাসনা শ্রবণ কর। ১৭

বিরিঞ্চিঃ ¯^iqv মধ্যে রুদ্রো গৌর্যা চ দক্ষিণে।
বামে লক্ষ্ম্যা হৃষীকেশঃ পূরতো দেবতাত্রয়ম্‌।। ১৮

যখন মহালক্ষ্মীর পূজা করিবে তখন দক্ষিণে মহাকালী ও উত্তরে mi¯^Zx এবং পশ্চাতে (পূর্বোক্ত) মিথুন-(স্ত্রী-পুরুষ) ত্রয় পূজা করিবে। ১৮

অষ্টাদশভুজা মধ্যে বামে চাস্যা দশাননা।
দক্ষিণেহষ্টভুজা লক্ষ্মীর্মহতীতি সমর্চয়েৎ।। ১৯

মধ্যে ¯^iv (mi¯^Zx) সহ বিরিঞ্চি (ব্রহ্মা), দক্ষিণে গৌরীসহ রুদ্র, বামে লক্ষ্মীসহ হৃষীদেশ এবং সম্মুখে দেবতাত্রয়ের পূজা করিবে। ১৯

অষ্টাদশভুজা চৈষা যদা পূজ্যা নরাধিপ।
দশাননা চাষ্টভুজা দক্ষিণোত্তরয়োস্তদা।
কালমৃত্যু চ সংপূজ্যৌ সর্ব্বরিষ্টপ্রশান্তয়ে।। ২০

হে নরাধিপ, যখন অষ্টাদশভুজা বা দশাননা বা অষ্টভুজার পূজা করিবে, তখন সকল অরিষ্ট (বিঘ্ন)-প্রশান্তির জন্য দক্ষিণ ও উত্তর দিকে যথাক্রমে মহাকাল ও মহামৃত্যুর পূজা করিবে। যখন শুম্ভাসুরনাশিনী অষ্টভুজার পূজা করিবে, তখন ইঁহার শৈলপুত্রী প্রভৃতি নবশক্তির এবং রুদ্র ও গণেশের পূজা করিবে এবং ‘নমো দেব্যৈ’ ইত্যাদি স্তোত্র দ্বারা মহালক্ষ্মীর অর্চনা করিবে। ২১-২৩

যদা চাষ্টভুজা পূজ্যা শুম্ভাসুরনিবর্হিণী।
নবাস্যাঃ শক্তয়ঃ পূজ্যাস্তথা রুদ্রবিনায়কৌ।। ২১

নমো দেব্যা ইতি স্তোত্রৈর্মহালক্ষ্মীং সমর্চয়েৎ।
অবতারত্রয়ার্চায়াং স্তোত্রমন্ত্রাস্তদাশ্রয়াঃ।। ২২

অষ্টাদশভুজা চৈষা পূজ্যা মহষিমর্দিনী।
মহালক্ষ্মীর্মহাকালী সৈব প্রোক্তা mi¯^Zx|
ঈশ্বরী পূণ্যপাপানাং সর্ব্বলোকমহেশ্বরী।। ২৩

দেবীর অবতারত্রয়ের অর্চনায় তত্তৎ মাহাত্ম্যোক্ত স্তোত্রমন্ত্রের প্রয়োগ করিবে ও অষ্টাদশভুজা মহিষমর্দিনীর পূজা করিবে। তিনিই পাপপুণ্যের (ফলদাত্রী), সর্বলোকের মহেশ্বরী। তিনিই ত্রিগুণানুসারে মহালক্ষ্মী, মহাকালী ও gnvmi¯^Zx নামে অভিহিতা। ২৪-২৫

মহিষান্তকরী যেন পূজিতা স জগৎপ্রভুঃ।
পূজয়েজ্জগতাং ধাত্রীং চণ্ডিকাং ভক্তবৎসলাম্‌।। ২৪

মহীষাসুরের অন্তকরী (নাশকারিণী) যাঁহার দ্বারা পূজিতা হন, তিনি জগতের প্রভু হন। অতএব, ভক্তবৎসলা জগদ্ধাত্রী চণ্ডিকার পূজা করিবে। ২৬

অর্ঘ্যাদিভিরলঙ্কারৈর্গন্ধপুষ্পৈস্তথাক্ষতৈঃ।
ধূপৈর্দীপৈশ্চ ˆb‡e‰`¨-b©vbvf¶¨-mgwš^‰Zt|| ২৫

হে নৃপ, অর্ঘ্যাদি, অলঙ্কারসকল, গন্ধপুষ্প এবং আতপ তণ্ডুল, ধূপ, দীপ, নানা Avnvh©mgwš^Z নৈবেদ্য, রুধিরসিক্ত বলি, মাংস, মদ, প্রণাম, আচমনীয়, সুগন্ধি চণ্‌দন এবং কর্পূরযুক্ত Zv¤^~jvw` উপচার দ্বারা ভক্তিভাবে দেবীর পূজা করিবে। দেবীর সম্মুখে বামভাগে দেবীর সাযুজ্যপ্রাপ্ত ছিন্নশির মহাসুর মহিষকে এবং দক্ষিণদিকের পুরোভাগে সমগ্র ag©¯^iƒc চরাচরধারী ভগবান সিংহের পূজা করিবে। ২৭-৩০

রুধিরাক্তেন বলিনা মাংসেন সুরয়া নৃপ।
প্রণামাচমনীয়েন চন্দনেন সুগন্ধিনা।
সকর্পূরৈশ্চ Zv¤^y‰jf©w³fve-mgwš^‰Zt|| ২৬

বামভাগেহগ্রতো দেব্যাশ্ছিন্নশীর্ষং মহাসুরম্‌।
পূজয়েন্মহিষং যেন প্রাপ্তং সযুজ্যমীশয়া।। ২৭

দক্ষিণে পুরতঃ সিংহং সমগ্রং ধর্মমীশ্বরম্‌।
বাহনং পূজয়েদ্দেব্যা ধৃতং যেন চরাচরম্‌।। ২৮

ততঃ কৃতাঞ্জলির্ভূত্বা স্তুবীত চরিতৈরিমৈঃ
একেন বা মধ্যমেন নৈকেনেতররোরিহ।। ২৯

দেবীর বাহন সিংহ চরাচর বিশ্ব ধারণ করেন। অনন্তর কৃতাঞ্জলিপুটে এই চরিত্রসমূহ দ্বারাই স্তব করিবে। ৩১

চরিতার্ধন্তু ন জপেজ্জপংশ্ছিদ্রমবাপ্নুয়াৎ।
স্তোত্রমন্ত্রৈঃ স্তুবীতেমাং যদি বা RM`w¤^Kvg&|| ৩০

একমাত্র মধ্যম চরিত্র দ্বারাই স্তব করিতে পার; কিন্তু কেবলমাত্র প্রথম বা উত্তম চরিত্র দ্বারা স্তব করিবে না। চরিতার্থ পাঠ করাও উচিত নয়। এইরূপ পাঠে পূজার অঙ্গহানি হয়। ৩২

প্রদক্ষিণা-নমস্কারান্‌ কৃত্বা মুর্ধ্নি কৃতাঞ্জলিঃ।
ক্ষমাপয়েজ্জগদ্ধাত্রীং মুহুর্মুহু রতন্দ্রিতঃ।। ৩১

অথবা মস্তকে কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রদক্ষিণ ও প্রণাম সহকারে সকল স্তোত্ররূপ মন্ত্রপাঠপূর্বক এই দেবীর স্তব করিবে। ৩৩

প্রতিশে­াকঞ্চ জুহুয়াৎ পায়সং তিলসর্পিষা।
জুহুয়াৎ স্তোত্রমন্ত্রৈর্বা চণ্ডিকায়ৈ শুভং হবিঃ।। ৩২

অনলস হইয়া মুহুর্মুহুঃ জগদ্ধাত্রীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে। সপ্তশতীর প্রতিশে­াক পাঠপূর্বক তিলযুক্ত ঘৃত ও পায়স দ্বারা হোম করিবে। ৩৪

নমো নমঃ পদৈর্দেবীং পূজয়েৎ সুসমাহিতঃ।
প্রয়তঃ প্রাঞ্জলিঃ প্রহ্বঃ প্রাণানারোপ্য* চাত্মনি।
সুচিরংডাবয়েদ্দেবীং চণ্ডিকাং তন্ময়ো ভবেৎ।। ৩৩
*প্রণম্যারোপ্য ইতি বা পাঠঃ।

অথবা কেবল শুদ্ধ ঘৃত দ্বারা প্রতিশে­াক পাঠ করিয়া চণ্ডিকার উদ্দেশ্যে হোম করিবে এবং ‘নমো নমঃ’ ইত্যাদি পদ দ্বারা সমাহিতচিত্তে দেবীর পূজা করিবে। ৩৫
সংযতচিত্ত, কৃতাঞ্জলি ও প্রণত হইয়া আত্মায় প্রাণবায়ুসমূহ আরোপ (সংযোগ) করিয়া দীর্ঘকাল চণ্ডিকাদেবীর ভাবনা করিতে করিতে তন্ময় হইবে। ৩৬

এবং যঃ পুজয়েদ্‌ ভক্ত্যা প্রত্যহং পরমেশ্বরীম্‌।
ভুক্ত্বা ভোগান্‌ যথাকামং দেবীসাযুজ্যমাপ্নুয়াৎ।। ৩৪

এইরূপে যিনি ভক্তিপূর্বক প্রত্যহ পরমেশ্বরীর পূজা করেন, তিনি যথাভিলষিত বস্তু ভোগ করিয়া মহিষাসুরবৎ দেবীর সাযুজ্য প্রাপ্ত হন। ৩৭

যো ন পূজয়তে নিত্যং চণ্ডিকাং ভক্তবৎসলাম্‌।
ভস্মীকৃত্যাস্য পূণ্যানি নির্দেহেৎ পরমেশ্বরী।। ৩৫

যিনি ভক্তবৎসলা চণ্ডীর পূজা না করেন, পরমেশ্বরী তাঁহার সকল পুণ্য ভস্মীভূত করিয়া তাহাকে উৎপীড়িত করেন। ৩৮

তস্মাৎ পূজয় ভূপাল সর্ব্বলোকমহেশ্বরীম্‌।
যথোক্তেন বিধানেন চণ্ডিকাং সুখমাপ্স্যসি।। ৩৬

অতএব হে ভূপাল, যথোক্ত বিধানে সর্বলোক-মহেশ্বরী চণ্ডিকার পূজা করিবে। তাহা হইলে ইহলোকে ও পরলোকে সুখী হইবে। ৩৯

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে বৈকৃতিকরহস্যং সমাপ্তম্‌।

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্গত বৈকৃতিকরহস্যের অনুবাদ সমাপ্ত।


(৩)
মূর্তি রহস্য

[ নন্দজাদি সপ্ত মূর্তির উপাসনা উক্ত হইতেছে- ]

মূল

অনুবাদ

ঋষিরুবাচ
নন্দা ভগবতী নাম যা ভবিষ্যতি নন্দজা।
সা স্তুতা পূজিতা ধ্যাতা বশীকুর্যাজ্জগত্রয়ম্‌।। ১

(মেধা) ঋষি বলিলেন-ভগবতী নন্দা নামে যে নন্দদুহিতা আবির্ভূতা হইবেন, তাঁহাকে স্তব, পূজা ও ধ্যান করিলে ত্রিলোক বশীভূত হইবে। ১

কনকোত্তমকান্তিঃ সা myKvwšÍKbKv¤^iv|
দেবী কনকবর্ণাভা কনকোত্তমভূষণা।। ২

সেই দেবী উজ্জ্বল-সুবর্ণ-কান্তিযুক্তা, ¯^Y©cÖf-e¯¿-cwiwnZv, কনকবর্ণা ও ¯^Y©vj¼vi‡kvwfZv| ২

কমলাঙ্কুশপাশাব্জৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা।
ইন্দিরা কমলা লক্ষ্মীঃ সা শ্রী i“´v¤^yRvmbv|| ৩

তাঁহার চারি হস্ত পদ্ম, অঙ্কুশ, পাশ ও অব্জ (শঙ্খ) দ্বারা অলঙ্কৃত। তিনি ইন্দিরা, কমলা, লক্ষ্মী ও শ্রী এবং তাঁহার আসন i“´v¤^yR (¯^Y©cÙ)| ৩

যা রক্তদন্তিকা নাম দেবী প্রোক্তা ময়ানঘ।
তস্যাঃ ¯^iƒcs বক্ষ্যামি শৃণু সর্ব্বভয়াপহম্‌।। ৪

হে অনঘ (নিষ্পাপ), যে রক্তদন্তিকা দেবীর কথা উক্ত হইয়াছে তাঁহার সর্বভয়নাশক ¯^iƒc বলিব, শ্রবণ কর। ৪

i³v¤^iv রক্তবর্ণা রক্তসর্ব্বাঙ্গভূষণা।
রক্তায়ুধা রক্তনেত্রা রক্তকেশাতিভীষণা।। ৫

তিনি রক্তবসনা, রক্তবর্ণা, রক্তালঙ্কারে সর্বাঙ্গশোভিতা, রক্তবর্ণ অস্ত্রধারিণী, রক্তনয়না, রক্তকেশা ও অতিভীষণা। ৫

রক্ততীক্ষ্ণনখা রক্তবসনা রক্তদন্তিকা।
পতিং নারীবানুরক্তা দেবী-ভক্তং ভজেজ্জনম্‌।। ৬

তাঁহার তীক্ষ্ণ নখগুলি রক্তবর্ণ এবং তিনি রক্ত-জিহ্বা ও রক্ত-দংষ্ট্রা। নারী যেমন পতির প্রতি অনুরক্তা হন, তিনি সেইরূপ ভক্তজনের প্রতি অনুরাগিণী (কৃপালু) ৬

বসুধেব বিশালা সা সুমেরুযুগলস্তনী।
দীর্ঘৌ j¤^vewZ¯’~‡jŠ তাবতীব মনোহরৌ।। ৭

তাঁহার শরীর বিশ্বের ন্যায় বিশাল এবং তাঁহার সুমেরুতুল্য স্তনযুগল দীর্ঘ, j¤^v, অতিস্থূল, অতীব মনোহর, কর্কশ, অতিশয় কান্তিযুক্ত সর্বানন্দের পয়োনিধি (সাগর) এবং দেবী ভক্তগণকে সর্ব-কামধুক (সকলবাসনাপূরক) সেই স্তনযুগল পান করাইয়া থাকেন। ৭-৮

কর্কশাবতিকান্তৌ তৌ সর্ব্বানন্দপয়োনিধী।
ভক্তান্‌ সংপায়য়েদ্দেবী সর্ব্বকামদুঘৌ স্তনৌ।। ৮

খড়্‌গং পাত্রঞ্চ মুসলং লাঙ্গলঞ্চ বিভর্তি সা।
আখ্যাতা রক্তচামুণ্ডা দেবী যোগেশ্বরীতি চ।। ৯

দেবী হস্তে খড়্‌গ, মধুপানের পাত্র, মুষল ও লাঙ্গল ধারণ করেন। তিনি রক্তচামুণ্ডা ও যোগেশ্বরী নামে আখ্যাতা। ৯

অনয়া ব্যাপ্তমখিলং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্‌।
ইমাং যঃ পূজয়েদ্‌ ভক্ত্যা স ব্যাপ্নোতি চরাচরম্‌।
ভুক্ত্বা ভোগান্‌ যথাকামং দেবী সাযুজ্যমাপ্নুয়াৎ।। ১০

সমগ্র স্থাবর ও জঙ্গম জগৎ তাঁহার দ্বারা পরিব্যাপ্ত। তাঁহাকে যিনি ভক্তিপূর্বক পূজা করেন, তিনি চরাচরব্যাপী হন (অর্থাৎ সর্বব্যাপিত্বরূপ আত্মজ্ঞান লাভ করেন)। ১০

অধীতে যঃ ইদং নিত্যং রক্তদন্তা-বপুস্তবম্‌।
তং সা পরিচরেদ্দেবী পতিং প্রিয়মি-বাঙ্গনা।। ১১

যিনি রক্ত-দন্তা মূর্তির এই স্তব নিত্য পাঠ করেন, তাঁহাকে দেবী-নারী যেরূপ প্রিয় পতিকে সেবা করেন-সেইরূপ পরিচর্যা (প্রতিপালন) করেন। ১১

শাকম্ভরী নীলবর্ণা নীলোৎপলবিলোচনা।
গম্ভীরনা-ভিস্ত্রিবলী-বিভূষিত-তনূদরী।
সুকর্কশ-সমোত্তুঙ্গ-বৃত্তপীনঘনস্তনী।। ১২

শাকম্ভরী দেবী নীলবর্ণা ও নীলপদ্মনয়না। তাঁহার নাভি গভীর, তাঁহার উদার ক্ষীণ ও ত্রিবলী-ভূষিত। ১২

মুষ্টিং শিলীমুখাপূর্ণং কমলং কমলালয়া।
পুষ্পপল­বমূলাদি-ফলাঢ্যং শাকসঞ্চয়ম্‌।। ১৩

তাঁহার স্তনযুগল সুকর্কশ, সমান, উত্তুঙ্গ (উচ্চ), বৃত্ত (সুগোল), পীন ও ঘনসন্নিবিষ্ট এবং ইনি কমলাসনা। ইনি বাণপূর্ণ মুষ্টি, পদ্ম এবং অনন্তকাম্যরসযুক্ত, ক্ষুধা তৃষ্ণা জরা ও মৃত্যুনাশক, পুষ্প, পল­ব, মূলাদি ও ফলযুক্ত শাকসমূহ এবং বাণ ধারণ করিয়াছেন। ১৩-১৪

কাম্যানন্তরসৈর্যুক্তং ক্ষুৎতৃণ্‌মৃত্যু-জরাপহম্‌।
কার্মুকঞ্চ স্ফুরৎকান্তিঃ বিভর্তি পরমেশ্বরী।। ১৪

শাকম্ভরী শতাক্ষী সা সৈব দুর্গা প্রকীর্তিতা।
বিশোকা দুষ্টদমনী শমনী দুরিতাপদাম্‌।
উমা গৌরী সতী চণ্ডী কালিকা সাপি পার্বতী।। ১৫

সেই পরমেশ্বরী শাকম্ভরী উজ্জ্বলকান্তিযুক্তা ও শতনয়না। তিনিই দুর্গা নামে প্রসিদ্ধা। ১৫
তিনিই বিশোকা, দুষ্টদমনী, পাপনাশিনী ও বিপত্তারিণী। তিনিই উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী, কালিকা ও পার্বতী নামে অভিহিতা। ১৬

শাকম্ভরীং স্তুবন্‌ ধ্যায়ন্‌ জপন্‌ সম্পুজয়ন্নমন।
অক্ষষ্যমশ্নুতে শীঘ্রমন্নপানামৃতং ফলম্‌।। ১৬

শাকম্ভরী দেবীকে স্তব, ধ্যান, জপ, পূজা ও নমস্কার করিলে শীঘ্র অক্ষয় অন্নপানরূপ অমৃত ফল লাভ হয়। ১৭

ভীমাপি নীলবর্ণা সা দংষ্ট্রাদশন-ভাসুরা।
বিশাললোচনা নারী বৃত্তপীন-পয়োধরা।। ১৭

সেই ভীমা দেবী নীলবর্ণা। তাঁহার দাড়া (j¤^v দাঁত) ও দন্ত উজ্জ্বল। সেই দেবী বিশালনয়না। তাঁহার স্তনযুগল গোলাকার, পীন (স্থূল) ও অমৃতপূর্ণ। ১৮

চন্দ্রহাসঞ্চ ডমরুং শিরঃপাত্রঞ্চ বিভ্রতী।
একবীরা কালরাত্রিঃ সৈবোক্তা কামদা স্তুতা।। ১৮

তিনি হস্তে চন্দ্রহাস (খড়্‌গ), ডমরু, মস্তক ও পানপাত্র ধারণ করেন। তিনি একবীরা ও কালরাত্রি নামে উক্তা। তিনি সংস্তুতা হইলে অভীষ্টদাত্রী হন। ১৯

তেজোমণ্ডলদুর্ধর্ষা ভ্রামরী চিত্রকান্তিভৃৎ।
চিত্রানুলেপনা দেবী চিত্রাভরণভূষিতা।
চিত্রভ্রমরপাণিঃ সা মহামারীতি গীয়তে।। ১৯

সেই দেবী ভ্রামরী অনেকবর্ণধারিণী, তেজামণ্ডলদীপ্তা, নানাবর্ণ-অনুলেপনে অনুলিপ্তা এবং বিচিত্র অলঙ্কারশোভিতা। ২০

ইত্যেতা মূর্তয়ো দেব্যা ব্যাখ্যাতা বসুধাধিপ।
জগন্মাতুশ্চণ্ডিকায়াঃ কীর্তিতাঃ কামধেনবঃ।। ২০

তিনি হস্তে নানাবর্ণ ভ্রমর ধারণ করেন এবং তিনি মহামারী (মহামৃত্যু) নামে অভিহিতা। হে পৃথিবীপতি, জগন্মাতা চণ্ডিকা দেবীর এই সকল মূর্তি ব্যাখ্যাত হইল। এই মূর্তিসমূহ কামধেনুরূপে (সর্বকামপ্রদারূপে) কীর্তিতা। ২১

ইদং রহস্যং পরমং ন বাচ্যং যস্য কস্যচিৎ।
ব্যাখ্যানং w`e¨g~Zx©bvgax®^vewnZt ¯^qg&|| ২১

এই পরম মূর্তিরহস্য যাহাকে-তাহাকে বলা উচিত নহে। এই সকল দিব্য মূর্তির আখ্যান ¯^qs অর্থাবধানপূর্বক পাঠ করা উচিত। অতএব সর্বপ্রযত্নে নিরন্তর দেবীমাহাত্ম্য জপ কর। ২২-২৩
এইমাহাত্ম্যপাঠমাত্রই মানুষ সপ্তজন্মার্জিত ব্রহ্মহত্যাদি সকল ঘোর পাপ হইতে বিমুক্ত হয়। ২৪

তস্মাৎ সর্ব্বপ্রযত্নেন দেবীং জপ নিরস্তরম্‌।
সপ্তজন্মার্জিতৈর্ঘোরৈর্ব্রহ্মহত্যাসমৈরপি।
পাঠমাত্রেণ মন্ত্রাণাং মুচ্যতে সর্ব্বকিল্বিষৈঃ।। ২২

দেব্যা ধ্যানং ময়াখ্যাতং গুহ্যাদ্‌ গুহ্যতরং মহৎ।
তস্মাৎ সর্ব্বপ্রযত্নেন সর্ব্বকামফলপ্রদম্‌।। ২৩

গুহ্য হইতে গুহ্যতর, মহৎ ও সর্বকামফলপ্রদ দেবীধ্যান তোমার নিকট বর্ণিত হইল। অতএব সর্বপ্রযত্নে তাঁহার আরাধনা কর। ২৫

দেব্যাশ্চৈব প্রসাদেন সর্ব্বমান্যো ভবিষ্যসি।
শান্তিঃ পুষ্টিস্তথা লক্ষ্মীরেতৎ সর্ব্বং প্রযচ্ছতি।। ২৪

সর্ব্বরূপময়ী দেবী সর্ব্বং দেবীময়ং জগৎ।
অতোহহং বিশ্বরূপাং ত্বাং নমামি পরমেশ্বরীম্‌।। ২৫

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে খিলাংশে মূর্তিরহস্যং সমাপ্তম্‌।

শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত মূর্তিরহস্যের অনুবাদ সমাপ্ত।



Print