
মহিষাসুর বধ
মহাশক্তিসম্পন্না দেবী দুর্গার রূপ-জ্যোতি দর্শনে অসুরকুল দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। তখন সেই মুহ্যমান অসুরদের মধ্যে শুম্ভ-নিশুম্ভ দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল। প্রথমে এগিয়ে এল শুম্ভ সেই কোটি সূর্যের মিলিত জ্যোতিরূপ শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করতে। কিন্তু সেই দিব্যশক্তিকে দেখে সেও বিব্রত হয়ে পড়ল। বিদ্রূপ করে সে বলল, ‘হে দেবী, তুমি তো সমগ্র দেবকুলের শক্তি গ্রহণ করে যুদ্ধ করছ। এদিকে আমরা একা একা যুদ্ধ করছি। তুমি আমাদের মতো একা একা যুদ্ধ করো।’
দেবী তখন সেইসব দেবশক্তির জ্যোতিঃপুঞ্জ নিজের মধ্যে সংবৃত করে ফেললেন এবং দেখিয়ে দিলেন যেন সমস্ত জ্যোতি তাঁরই সৃষ্টি। তারপর দেবী বললেন দৃঢ়কণ্ঠে-“একৈবাহং জগতত্র্য দ্বিতীয়া কা মমাপরা।” -আমা ব্যতীত জগতে কোনো শক্তি নেই, আমিই একমাত্র শক্তি। আমিই এই জগতের সম্রাজ্ঞী। ‘অহং রাষ্ট্রী’। আমিই এই জগতের কর্ত্রী। আমার দ্বারাই সব পরিচালিত। আমা হতেই সমস্ত শক্তি উদ্ভূত-একথাও তিনি ঘোষণা করলেন এবং দেখিয়ে দিলেন সেই সমস্ত পুঞ্জীভূত জ্যোতি, তেজশক্তি সব তাঁর মধ্যে সংবৃত হয়ে মিলিয়ে গেল। তা দেখে অবাক হয়ে গেল শুম্ভ-নিশুম্ভ। তারা দেবীর স্বরূপ দর্শন করল এবং দেবীও দেখিয়ে দিলেন তাবৎ সৃষ্টি তাঁরই। অর্থাৎ প্রকাশ হয়ে গেল দেবীই সমস্ত শক্তির উত্স।
ব্রহ্মার বলে বলীয়ান মহিষাসুর। মহিষাসুরকে কোনও পুরুষদেবতা বধ করতে পারবে না-এরূপ বর পেয়েছিল মহিষাসুর স্বয়ং ব্রহ্মার কাছ থেকে। এই মহিষাসুরকে দেবী দুর্গা তিনবার বধ করেছিলেন। প্রথমে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডা রূপে তাকে তিনি বধ করেন। দ্বিতীয়বারে এবং তৃতীয়বারে তাকে বধ করেন দেবী দশভুজা দুর্গারূপে। মহিষাসুর স্বপ্নে ভদ্রকালীর মূর্তি দেখে এবং সেই মূর্তিকে সে আরাধনা করেছিল। আরাধনায় তুষ্ট হয়ে দেবী দর্শন দিয়েছিলেন মহিষাসুরকে। মহিষাসুর দেবীকে নির্ভয়ে জানিয়েছিল সে মৃত্যুকে ভয় করে না। সে কেবল চায় দেবীর সঙ্গে সেও যেন পূজিত হয় মর্ত্যে। তখন দেবী মহিষাসুরকে বর দিয়েছিলেন যে, ‘ভদ্রকালী’, ‘দুর্গা’, ‘উগ্রচণ্ডা’ এই তিন মূর্তিতে তাঁর পদলগ্ন হয়ে থাকবে; এবং দেবতা, রাক্ষস ও মানুষ সকলেই তাকে পূজা করবে। দেবীর সঙ্গে একইভাবে সেও পূজিত হবে-এটাই ছিল দেবীর আশীর্বাদ মহিষাসুরের প্রতি।