
আদ্যাশক্তি শ্রী শ্রীদুর্গা
শ্রীশ্রীচণ্ডী সপ্তশতীতে আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রধানতঃ তিনটি রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে অসুরবিনাশ ও দেবতাদের কল্যাণবিধানের জন্য দেবতাদের প্রার্থনায় তাঁর স্থূলরূপে প্রকাশ। প্রথম চরিত্রে দেবী অরূপা, মহাশক্তি-মহাকালী। মধ্যচরিত্রে তিনি মহালক্ষ্মী। আর উত্তর চরিত্রে তিনিই মহাসরস্বতী।
মহাপ্রলয় কালে ভগবান নারায়ণ যখন যোগনিদ্রারূপিণী মহাকালীর তামসী শক্তি প্রভাবে নিদ্রায় আচ্ছন্ন তখন তাঁর নাভি থেকে উত্থিত কমলে প্রজাপতি ব্রহ্মার সৃষ্টি হয়। আর তাঁর কর্ণমল থেকে সৃষ্টি হয় মধু ও কৈটভ নামের দুই অসুর। এরা ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা দারুন ভয় পেয়ে মহাকালীর স্তব করলে দেবী প্রসন্না হয়ে নারায়ণের শরীরে-নেত্র-মুখ-নাসিকা-হৃদয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে বিষ্ণু জেগে উঠে মধু-কৈটভকে বধ করেন। এই মহাকালীর দশ মুখ, দশ হাত, দশ পা, কাজলের মতো গায়ের রঙ, দশ মুখে ত্রিশটি চোখ, দাঁত বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। ভীমা ভয়ঙ্করী এই মূর্তি। আবার রূপ-সৌভাগ্য-কান্তি ও শ্রীর ইনি প্রতিষ্ঠাস্বরূপা। দশ হাতে এঁর খড়্গ, বাণ, গদা, শূল, শঙ্খ, চক্র, ভূষণ্ডী, পরিঘ, ধনু ও রক্তমাখা নরমুণ্ড। এই মহাকালী দেবী ভগবতীর তামসী মূর্তি। এঁর পূজা করলে সাধক স্থাবর-জঙ্গমাত্মক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি হতে পারে-‘আরাধিতা বশীকুর্যাৎ পূজা কর্তুশ্চরাচরম।’
দ্বিতীয় চরিত্রে দেবতাদের রক্ষা করবার জন্য মহিষাসুরকে বধ করতে মহাদেবী সকল দেবতার শরীরের তেজ থেকে মহালক্ষ্মীরূপে আবির্ভূতা হন। বিভিন্ন দেবতাদের তেজ থেকে সৃষ্ট বলে দেবীর সর্বাঙ্গ নানা বর্ণে রঞ্জিত। ইনি দেবীর রাজসী মূর্তি। এই মহালক্ষ্মীর সাদা মুখ, নীল হাত, সাদা বক্ষস্থল, রক্তবর্ণের উদর, রক্তবর্ণের চরণযুগল, নীল রঙের ঊরু ও জঙ্ঘা। ইনি সুরাপান-জন্য উন্মত্তা। বিচিত্র মাল্য-বস্ত্রাদি ও অলঙ্কারভূষিতা। নানা সুগন্ধি অনুলেপিতা, কান্তি রূপ ও সৌভাগ্যশালিনী। যদিও ইনি সহস্রভুজা তবুও অষ্টদশভুজা হিসেবেই এঁর পূজা হয়ে থাকে। এঁর হাতে জপমালা, পদ্ম, বাণ-অসি, বজ্র, গদা, চক্র, ত্রিশূল, পরশু, শঙ্খ, ঘন্টা, পাশ, শক্তিদণ্ড, ঢাল, পানপাত্র, কমণ্ডলু বিরাজিত। এঁর পূজা করলে সাধক সর্বলোক ও দেবতাগণের উপর প্রভুত্ব করেন। ‘সর্বলোকানাং সদেবানাং প্রভুর্ভবেৎ।’
আর উত্তর চরিত্রে শুম্ভ-নিশুম্ভ ভাইদের বধ করবার জন্য গৌরীদেহ থেকে মহাসরস্বতীর আবির্ভাব হয়। ইনি দেবীর সাত্ত্বিকী শক্তি। অষ্টভুজা এই দেবী হাতে বাণ, মুষল, শূল, চক্র, শঙ্খ, ঘন্টা, হল, ধনু ধরে আছেন। ভক্তিভাবে এই দেবীর পূজা করলে পূজক সর্বজ্ঞত্ব লাভ করেন। ‘এষা সম্পূজিতা ভক্ত্যা সর্বজ্ঞত্বং প্রযচ্ছতি।’