
কপালিনী
দেবী দুর্গারই অপর এক রূপ কপালিনী। মহাপ্রলয়কালে এই দেবীর আবির্ভাব ঘটে। রণরঙ্গিণী মূর্তি ধারণ করেছিলেন দেবী। ব্রহ্মাদি দেবতাদের নিহত করে তাঁদের কপাল নিয়ে প্রলয়কালে বিচরণ করেন দেবী চণ্ডিকা। হাতে কপাল তাই তাঁর নাম কপালিনী। এর মধ্যে রয়েছে গূঢ় রহস্যতত্ত্ব। জগত্প্রপঞ্চ যেন তাঁর হাতে, বা প্রপঞ্চরূপ পদ্ম হাতে বিচরণকারিণী দেবী চণ্ডিকা।
শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে : ‘ব্রহ্মাদি দেবতার কপাল (শিরোস্থিত অস্থিসকল) হাতে ধারণ করে নৃত্য করেন বলে দেবীর অপর নাম কপালিনী।’ অর্থাৎ এই জগত্প্রপঞ্চরূপ কপালকে যেন তিনি স্বহস্তে ধরে রয়েছেন। মায়াময় জগৎ সৃষ্টির মূলেও তিনি। কাজেই প্রপঞ্চময় সৃষ্ট জগৎকে ধরে থাকা তাঁর কাছে কিছু আশ্চর্য নয়। প্রাণময় জগতের সকল ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি স্ব-স্বরূপ প্রকাশ করেন। সর্বভূতে তিনি যে অধিষ্ঠিতা এটাই তার প্রমাণ। সকল জীবের কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয়র মধ্যে তিনি ক্রিয়াশীল। সর্বভূতে চিত্শক্তিরূপে অর্থাৎ চেতনা শক্তির মধ্যে তিনি বিরাজমানা। তাই সেই সর্বময় শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী তো আমাদের কাছে আরাধ্যা হবেনই।
আবার আর এক মতে স্বয়ং শিবই নাকি কপাল হাতে নিয়ে বিচরণকালে কপালীমূর্তি ধরেছিলেন। মহাদেব সংহারকর্তা, তথাপি তিনি ভোলা মহেশ্বর। আপনভোলা, মহাযোগী, উদাসীনাচার্য। ধ্যানমগ্ন ঋষি তিনি-যোগীরাজ। নির্জনতাপ্রিয় শান্তিকামী। অল্পতেই তিনি তুষ্ট। কিন্তু তিনি রুষ্ট হলে আর কারো রক্ষা নেই। আমরা জানি, আদি দেবতা মহাদেব। কিন্তু তাঁকেও ব্রহ্মার শাপে কপালী হতে হয়েছে।