Increase Reset Decrease

মহিষাসুরের জন্ম বৃত্তান্ত

বরাহপুরাণ অনুসারে
আদি কল্পে ‘সংবত্সর’ নামে এক ঋষি ছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম ছিল ‘সুপার্শ্ব’। সুপার্শ্বের পুত্রের নাম ‘সিন্ধুদ্বীপ’। ঋষির বংশে জন্ম হলেও সিন্ধুদ্বীপ ছিলেন অসুর। সিন্ধুদ্বীপের কন্যার নাম ‘মাহিষ্মতী’। তিনি ছিলেন দৈত্য বিপ্রচিত্তির অগ্রজা। [চণ্ডীতে (১১।৪৩-৪৪) দেবীর মুখে বিপ্রচিত্তি -বংশীয় দানবদের বধ করার অঙ্গীকার রয়েছে ]। মাহিষ্মতী একদিন ‘অস্বর’ নামে এক ঋষির আশ্রমে সখীগণ-সহ ভ্রমণ করতে যান। আশ্রমের রমণীয় পরিবেশ দেখে তাঁর সেখানে বাস করার সুতীব্র লোভ হয়। তিনি মহিষীর রূপ ধারণ করে ঋষিকে ভয় দেখাতে উপস্থিত হলে ঋষি ধ্যাননেত্রে মাহিষ্মতীর প্রকৃতি পরিচয় অবগত হন এবং ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ প্রদান করেনঃ ‘পাপীয়সি! তুই যেমন মহিষীরূপ ধারণ করে আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিস, তেমনি আমার অভিশাপে শতবর্ষ পর্যন্ত মহিষীরূপেই অবস্থান করবি।’ অভিশাপ শুনে মাহিষ্মতী আতঙ্কিত হয়ে ঋষির চরণপ্রান্তে পতিত হলেন এবং শাপমুক্তির জন্য কাতর অনুনয় করতে লাগলেন। তাতে ঋষির দয়া হল। তিনি বললেন, মহিষীরূপে এক পুত্র প্রসবের পর তাঁর শাপমুক্তি ঘটবে। মাহিষ্মতীর গর্ভেই মহিষাসুরের জন্ম হয়।

কালিকাপুরাণ অনুসারে
‘রম্ভ’ নামে এক দৈত্য দীর্ঘকাল মহাদেবের আরাধনা করেন। মহাদেব প্রসন্ন হয়ে তাঁকে বরদান করতে চাইলে অপুত্রক রম্ভাসুর তাঁর তিন জন্মে প্রবল পরাক্রান্ত এক পুত্রসন্তান লাভের বর প্রার্থনা করেন। মহাদেব রম্ভাসুরের প্রার্থনা অনুমোদন করেন। উপর্যুপরি তিন জন্মে (তিন কল্পে বা মন্বন্তরে) রম্ভাসুর ‘রম্ভ’ নামেই জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রতি জন্মেই মহিষীর গর্ভে তাঁর পুত্ররূপে মহিষাসুরের জন্ম হয়। দেবতাগণের তেজোসম্ভূতা হয়ে দেবী আদ্যাশক্তি যথাক্রমে উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী এবং দুর্গা-রূপে প্রতি কল্পে মহিষাসুরকে বধ করেন।

বামন পুরাণ অনুসারে
‘রম্ভ’ ও ‘করম্ভ’ নামে দুই প্রবল পরাক্রান্ত অপুত্রক অসুর-ভাতৃদ্বয় পুত্রলাভের জন্য বহুকাল ধরে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তাঁদের তপস্যায় দেবরাজ ইন্দ্র ইন্দ্রত্ব হারাবার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। তিনি তপস্যারত করম্ভকে হত্যা করলেন। ভ্রাতার মৃত্যুতে রম্ভ ক্রোধে ও দুঃখে আত্মঘাতী হতে উদ্যত হলে অগ্নি তাঁকে প্রতিনিবৃত্ত করলেন এবং রম্ভের কঠোর তপশ্চর্যার জন্য বরদান করতে চাইলেন। তখন রম্ভ অগ্নিদেবকে বললেনঃ ‘আমার যেন ত্রিলোকবিজয়ী এক পুত্র জন্মায় এবং শক্তি ও তেজস্বিতায় সে যেন দেবতাদের অতিক্রম করে।’ অগ্নি বললেনঃ ‘তথাস্তু।’ অতঃপর রম্ভাসুর এক সুন্দরী মহিষীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে পত্নীত্বে বরণ করেন। সেই মহিষীর গর্ভে মহিষাসুরের জন্ম হয়।

Print