
কাশীর নবদুর্গা - দেবী স্কন্দমাতা
“জয় অম্বে গৌরী মৈঁয়া, জয় শ্যামা গৌরী। তুমকী নিশিদিন ধ্যাওত হরি ব্রহ্মা শিবাজী। মাংগ সিন্দুর বিরাজত টীকা মৃগমদকী। উজ্জ্বল দ্বৌনয়না চন্দ্রবদন যোকি। কনকসমান কলেবর রক্তাম্বর রাজে। রক্তপুষ্প গলমালা কণ্ঠনপর সাজে”
সামনে ছোট একটু ঢাকা বারান্দা, সেইটাই নাটমন্দির, মাঝখানে দেবীর বাহন সিংহ দেবীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। নাটমন্দিরের একপাশে কিছু প্রাচীন মূর্তির ভগ্নাবশেষ। একটি বড় শিবলিঙ্গ। তারপরেই দেবীর ছোট অন্ধকার গর্ভমন্দির। মন্দিরটি দোতলা। বেশ প্রমাণ আকারের দেবীর কষ্ঠিপাথরের সিংহবাহনা মূর্তি, চোখ তিনটি সাদা শংখের। বামকোলে ষড়ানন কার্তিকেয়,শরীরে কাপড় পরানো। চতুর্ভূজ মূর্তির উপরের দুটি হাতে মনে হল শতদল পদ্ম। নিচের একহাত দিয়ে কার্তিককে জড়িয়ে ধরে আছেন, আর এক হাতে অভয়মুদ্রা। খুব সুন্দর প্রসন্না মূর্তি। মায়ের প্রণাম মন্ত্র, “সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিত করদ্বয়া / শুভদা¯ত্ত সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী" দেওয়ালের কাছে ছোট বেদীর ওপর বিঘৎ খানেক উঁচু কালো কষ্টিপাথরে পদ্মাসীনা সরস্বতী বিগ্রহ। ইনিই কাশীখণ্ডের প্রাচীন বাগীশ্বরী দেবী। ছোট মুখ,তাতেও সাদাপাথরের, চোখ বসানো। লাল কাপড়ে সারা শরীর ঢাকা ছিল। শোনা যায়, ইনিই স্বয়ম্ভূ, মাটি থেকে উঠছেন। বহু প্রাচীন যে বিগ্রহ বেশ বোঝা যায়। শরীর ক্ষয়ে গিয়েছে বেশির ভাগই, তবুও সুন্দর মূতি। “য ব্রহ্মাচ্যুতশঙ্কর প্রভৃতিভির্দেবৈঃ সদা বন্দিতা। সা মাং পাতু সরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ-জ্যাডাপহা”-মন্ত্রটি দেওয়ালে লেখাও আছে-।
“দেবী পার্বতী শিবের জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাঁর এই জন্মে তিনি দেবতাবের প্রার্থনায় হিমালয়-কন্যা হয়ে জন্মেছিলেন।তখন তাঁর নাম ছিল শৈলপুত্রী পার্বতী-উমা। তারকাসুরের হাত থেকে বাঁচবার জন্য দেবতাদের প্রয়োজন ছিল শিবপার্বতীর একটি সন্তানকে, যিনি এই দুটি বিরাট শক্তির অংশে জন্ম নিয়ে দেবতাদের সেনাপতি হয়ে তারকাসুরকে বধ করবেন। যখন পার্বতী শিবকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন তখন নাম ছিল তাঁর ব্রহ্মচারিণী। সেই ব্রহ্মচারিণীর কঠোর তপস্যায় শিব প্রসন্ন হয়ে এসে নানা পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী পার্বতীকে বিয়ে করেন। তাঁদের এই কল্পের মিলনের ফলে জন্মগ্রহণ করলেন কুমার কার্তিকেয়। তাঁকে লালন-পালন করলেন ছয়জন কৃত্তিকা মাতা। সেই জন্য কার্তিকেয় হলেন ষড়ানন। এই ষড়ানন কার্তিয়ের জন্ম সম্পর্কে মহাভারতের বনপর্বে আরও বিচিত্র কাহিনী আছে যার উল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়োজন। এই কার্তিকেয়কে কোলে নিয়ে মা দুর্গার নাম এখানে স্কন্দমাতা।
স্কন্দ হিসাবে কার্তিকেয় বহু পরিচিত একটি ব্যাসরচিত পুরাণের মধ্যে দিয়ে, সেটির নাম ‘স্কন্দপুরাণ’। এই মহাবীর্যবান দেব সেনাপতি কার্তিকেয় যুদ্ধে তারকাসুরকে বধ করে দেবতাদের স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। এখানে মাত্র-পুত্র দুজনেরই পূজা করতে হয়।