Increase Reset Decrease

কপালিনী

কিংবদন্তী (১)

একবার খুব তর্র্ক-বিতর্ক হচ্ছে ব্রহ্মা বড় না বিষ্ণু বড়। ত্রিভুবনে কার প্রভাব বেশি? কে বিচার করবে কোন দেবতা বড়, কোন দেবতা ছোট? তর্কের মাত্রা ক্রমশ তুঙ্গে ওঠে। তখন হঠাৎই একটা উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা দৈববাণী হল: ‘যে বলতে পারবে এই আলোর উত্স কোথা থেকে সে-ই প্রকৃতপক্ষে এই ত্রিভুবনের প্রধান বলে বিবেচিত হবে।’ একথা শুনে ব্রহ্মা তখন স্ব-স্থান থেকে দ্রুতগতিতে ওপরের দিকে উঠতে থাকেন আলোর উত্স সন্ধানে এবং বিষ্ণুও যেখানে ছিলেন সেখান থেকে নীচের দিকে নামতে শুরু করেন আলোর উত্পত্তিস্থল জানার জন্য। ব্রহ্মা এভাবে অনেক দিন ধরে উঁচুতে উঠতে থাকেন, কিন্তু সে আলোর যে আর শেষ নেই! সে এক বিরাট জ্যোতির্ময় আলোক বলয়। অনেক দিন পর হঠাৎই দেখতে পান একটা কেতকী ফুল। পথশ্রান্ত ক্লান্ত পথিক ব্রহ্মা তখন সেই ফুলকে জিজ্ঞাসা করেন, এই আলোর উত্পত্তি কোথা থেকে? কেতকী ফুল বলে, ‘আলোর উত্স থেকে অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন আপনি।’ অনুসন্ধিত্সু ব্রহ্মা আলোর দূরত্ব জানতে চাইলে ফুল বলে ‘হে ভগবন্-তিন ব্রহ্মপ্রলয়কাল পার হয়ে এসেছেন আপনি অনেক আগেই।’ ব্রহ্মা তখন বুঝলেন যে আলোর উত্স এই ফুলটি নিশ্চয়ই জানে। কাজেই এই ফুলটিকে ধরলেই আলোর উত্স জানা যাবে। ব্রহ্মা তখন কেতকী ফুলকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন বিষ্ণুর কাছে এবং তাঁকে বললেন যে, ‘আলোর উত্পত্তিস্থল আমি দেখে এসেছি! সাক্ষী আছে এই কেতকী ফুল।’ এই অসত্য-কথা শুনেই কেতকী স্বরূপ প্রকাশ করল, অর্থাৎ সেই কেতকী ফুলরূপী পরীক্ষক সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির্ময় শিবমূর্তি ধরে আবির্ভূত হলেন। তা দেখে ব্রহ্মা তো অবাক! কারণ তিনি তো আলোর উত্স দেখেননি, কেবল কেতকী ফুলের কাছে শুনেছেন মাত্র। ব্রহ্মার এই মিথ্যাকথা বলার জন্য রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন মহাদেব এবং ক্রোধে নখ দিয়ে ব্রহ্মার একটা মাথা ছিঁড়ে ফেললেন। আহত ব্রহ্মা তখন শিবকে অভিশাপ দিলেন, ‘সারাজীবন তোমায় ভিক্ষা করতে হবে, নর-কপাল হাতে নিয়ে।’ ব্রহ্মার সেই অভিশপ্ত মাথার খুলি শিবের হাতে আটকে রইল। সেই থেকে কপাল হাতে বিচরণকারী শিব হলেন কপালী। ভিখারী রুদ্র মহাদেবও ছাড়ার পাত্র নন। ব্রহ্মাকে তখন তিনিও উল্টে অভিশাপ দিলেন। শিব বললেন, ‘কেউ কোনওদিন পূজা করবে না তোমাকে (ব্রহ্মাকে)।’ অভিশাপগ্রস্ত শিব আর ব্রহ্মার অবস্থা দেখছিলেন বিষ্ণু। তিনি তখন মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এলেন। শেষ পর্যন্ত বিষ্ণুর ইচ্ছায় শিব বারাণসীতে এলেন ভিক্ষাপাত্র হাতে এবং সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করে শাপমুক্ত হলেন। এসময় শিবের হাত থেকে সেই নর-কপাল বিচ্যুতও হয়েছিল। সাঙ্গ হল শিবের কপালীলীলা। শিবের এই ভিখারীরূপী কপালীমূর্তি দেখা যায় দেবী অন্নপূর্ণার সঙ্গে।

Print