Increase Reset Decrease

পরাশক্তি মহামায়া

মার্কণ্ডেয় পুরাণে মেধস ঋষি বলছেন দেবী মহামায়া নিত্যা সর্বদাই বর্তমানা, অনাদি জগৎরূপিনী। তিনিই জগতের যাবতীয় বস্তুরূপে প্রকাশিত, সর্বব্যাপী তিনি। তবুও লীলায় জগৎ রক্ষার্থে তাঁকে বহুবার, বহু নাম রূপে, বহুভাবে আবির্ভূত হতে হয়। সেই যে তাঁর দৈবী আবির্ভাব, নানা পুরাণে সেই মহামায়ার আবির্ভাব কথাই ব্যক্ত হয়েছে।

তাঁর সৃষ্ট সকল জীবগণকে এমন কী ব্রহ্মা-বিষ্ণুকেও তিনি মোহনিদ্রায় আচ্ছন্ন করে রাখেন। আবার-‘সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে।’ তিনি প্রসন্ন হলে বা যার উপর তাঁর অনুগ্রহ হয় তাকে তিনি কৃপা করে মোহের হাত থেকে মুক্ত করে রক্ষা করেন। তিনিই-‘সা বিদ্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী, সংসারবন্ধ হেতুশ্চ সৈব সর্বেশ্বরেশ্বরী।’ সনাতনী মহামায়া জীবের মুক্তির কারণস্বরূপা, পরাবিদ্যা-ব্রহ্মবিদ্যারূপিণী। আবার তিনিই সংসারে বন্ধনের হেতু স্বরূপিণী অবিদ্যারূপিনী মায়া। সর্বোপরি তিনিই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরাদি সকল ঈশ্বরেরও কর্ত্রী-‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবাদিনাম সর্বেষাম্ জননী পরা।’ তাঁদেরকে তিনিই স্ব স্ব কাজে নিযুক্ত রেখেছেন। সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার তাঁদের কাজ। দেবী মহামায়ার শক্তিতেই তাঁরা সেই কাজ করছেন। ‘তে তাং ধ্যায়ন্তি দেবেশাঃ পূজয়ন্তি পরাং মুদা। জ্ঞাত্বা সর্বেশ্বরীং শক্তিং সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশিনাম্।’ দেবতারা মহাদেবীর এই অচিন্ত্য শক্তিতত্ত্ব জেনে পরমানন্দে তাঁরই ধ্যান করেন।

এই যে পরাশক্তি মহামায়া-তাঁর উত্পত্তি হয় মর্ত্যে বা স্বর্গে, ভক্তের, সাধকের, বিপন্নের প্রার্থনায় আর্তিতে। করুণাময়ী জননী সন্তানের বিপদে ব্যাকুলা হয়ে অবতীর্ণা হন তাদের রক্ষার জন্য যুগে যুগে স্বর্গে ও মর্ত্যে-‘যদাস্তবন্তি তাং দেবা মনুজাশ্চ বিশাম্পতে। প্রাদুর্ভবতি ভূতানাং দুঃখনাশায় চাম্বিকা। নানারূপধরাদেবী নানাশক্তিসমন্বিতা। আবির্ভবতি কার্য্যার্থাং স্বেচ্ছয়া পরমেশ্বরী।।’ (দেবী ভাগবত)। নানা রূপ ধরে নানা শক্তি সংযুক্তা হয়ে তাঁর মর্ত্যে বা স্বর্গে লীলাবিগ্রহের প্রকাশ হয়। তখন যে ঋষির ধ্যানে তিনি যেভাবে প্রকাশিত হন তাঁকে সেই ঋষ্যাদির মন্ত্রে আহ্বান করা হয়। যেমন শ্রীদুর্গার ঋষি নারদ, জগদ্ধাত্রীরও নারদ। মহাকালীর ভৈরব ঋষি। তখন এই রকম নানা নাম দেবীর হয়। যদিও তত্ত্বত তিনি এক ও অদ্বিতীয়া, তবুও সাধককে সিদ্ধিদানের জন্য ‘উপাসকানাং কার্য্যার্থং মায়য়া বহুরূপিণী।’ সাধকের বাঞ্ছাপূর্ণকারিণী তারিণী নানা রূপ ধরে তাঁর হৃদয়পদ্মে আবির্ভূত হন। দুর্গা-কালী-জগদ্ধাত্রী-অন্নপূর্ণা-চণ্ডী-লক্ষ্মী-সরস্বতী-দুর্গারই দশমহাবিদ্যাদি বহুবিধ শক্তিমূর্তি। অন্যান্য নানা মূর্তি সবই আদ্যাশক্তি পরমাপ্রকৃতিরই নানা প্রয়োজনে জগতে প্রকাশিত বিভূতি।

এই সব দেবশক্তির মধ্যে হিন্দু দেবতাদের কল্পনায় বা ধ্যানপূজায় ভগবতী দুর্গারই প্রাধান্য সর্বাপেক্ষা।

Print